ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির ৮ জনই হাইকোর্টে খালাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

নোয়াখালীতে মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী ও তার কর্মচারীকে হত্যার দায়ে বিচারিক আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির ৮ জনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সাক্ষ্যপ্রমাণের যথাযথ বিচার-বিশ্লেষণ না করে ‘খেয়ালের বশে’ গণহারে ফাঁসির রায় দেওয়ায় উচ্চ আদালত উষ্মাও প্রকাশ করেছেন বলে আইনজীবীরা জানান।

১৪ বছর আগের ওই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির পর সোমবার বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি জাহিদ সারওয়ারের বেঞ্চ এ রায় দেন।

ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন মোফাজ্জল হোসেন জাবেদ, জাফর হোসেন মনু, আলি আকবর সুজন, শামছুদ্দিন ভুট্টু, সাহাব উদ্দিন, নাছির উদ্দিন মঞ্জু, আবু ইউসুফ সুমন ও তোফাজ্জল হোসেন জুয়েল। বাকি চার আসামির মধ্যে আবদুস সবুরের ফাঁসির দণ্ড পালটে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আর কামরুল হাসান সোহাগ, রাশেদ ড্রাইভার ও কামাল হোসেন ওরফে এলজি কামালের ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখেছেন আদালত। এরা সবাই পলাতক। তবে রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বিচারিক আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জোরালো সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সেগুলো আমলে না নিয়ে হাইকোর্ট ৮ আসামিকে খালাস দিয়েছেন। এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সংক্ষুব্ধ, আমরা আপিল করব।

২০০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে শহরের মোবাইল ব্যবসায়ী ফিরোজ কবির মিরণ ও তার দোকানের কর্মচারী সুমন পাল নগদ ১৩ লাখ টাকা ও কিছু মোবাইল ফোন সেট নিয়ে রিকশায় বাড়ি ফিরছিলেন। পথে নাপিতের পুল এলাকায় সন্ত্রাসীরা দুজকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরে টাকা ও মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে তাদেরকে কুপিয়ে খুন করে মরদেহ সড়কের পাশে ফেলে যায়।

ঘটনার পরদিন মিরনের বাবা এবি সিদ্দিক বাবুল মিয়া বাদী হয়ে ২৩ জনকে আসামি করে সুধারাম মডেল থানায় মামলা করেন।

১০ জনকে খালাস দিয়ে ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ এএনএম মোরশেদ খান ১২ জনের ফাঁসির রায় দেন। সোলাইমান জিসান নামে এক আসামি আগেই র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছিল।

রায় ঘোষণার পর আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিল বিবেচনায় নিয়ে আদালত ৮ জনকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ থেকে মুক্তি দিয়ে অনতিবিলম্বে তাদের জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

অন্য তিন আসামির ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকায় (তাদের স্বীকারোক্তি বিবেচনায় নিয়ে) ফাঁসির দণ্ডাদেশ হাইকোর্ট বিভাগ বহাল রেখেছেন।

খেয়ালি রায়ে আদালতের উষ্মা

সাক্ষ্যপ্রমাণ যথাযথ বিচার বিশ্লেষণ না করে খেয়ালের বশে বিচারিক আদালতে অধিক সংখ্যায় ফাঁসির রায় ঘোষণার বিষয়ে উচ্চ আদালত উষ্মা প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, হাইকোর্ট রায় ঘোষণার সময় উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, আইন এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ যথাযথ বিবেচনায় না নিয়ে ‘হুইমের’ ওপর ভিত্তি করে এই রায় প্রদান করা হয়েছে, যেটা উচিত নয়। আরও সতর্কভাবে সাক্ষ্যপ্রমাণ পরীক্ষা করা এবং আইনকে যথাযথভাবে বিবেচনায় রেখে এ ধরনের মামলা নিষ্পত্তির জন্য উচ্চ আদালত তাগিদ দিয়েছেন।

আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, ট্রায়াল কোর্ট ফাঁসির দণ্ড দিতে বেশি ভালোবাসেন। পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ না করে এই যে গণহারে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হচ্ছে। হাইকোর্টের অদ্যকার রায়ের মাধ্যমে এটাই প্রতিফলিত হয়েছে যে, ফাঁসি দিলে সেই ফাঁসি হাইকোর্ট ডিভিশন ও আপিল বিভাগে নাও টিকতে পারে। সাক্ষ্যপ্রমাণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রায় প্রদানের সময় এসেছে বলে আমি মনে করি।

শেয়ার করুন