নির্বাচনী সহিংসতায় ৬ জন নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আগের ৪ ধাপের মতো পঞ্চম ধাপেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঁচ জেলায় সহিংসতায় ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চাঁদপুরে দুইজন এবং মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, গাইবান্ধা ও বগুড়ায় ভোটগ্রহণ চলাকালে একজন করে প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

বুধবার সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত দেশের ৭০৮টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখন চলছে ভোট গণনা।

আমাদের চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুরের কচুয়া ও হাইমচরে নির্বাচনী সহিংসতায় দুইজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কচুয়া উপজেলার সাচার ইউনিয়নের হাতিরবন্ধ কেন্দ্রের বাইরে ইউপি সদস্যদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ছুরিকাঘাতে শরীফ নামে একজন নিহত হন। আরেকজনের মৃত্যু হয় হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের ইশানবালা ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। তার নাম এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি। এছাড়া দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষের সময় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে গিয়ে একজন গুরুতর আহত হন।

সন্ধ্যায় দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ।

আমাদের বগুড়া প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার গাবতলী‌র রা‌মেশ্বরপু‌রে দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর কর্মী-সমর্থক‌দের মধ্যে সংঘ‌র্ষে একজ‌ন নিহত হয়েছেন। নিহত জা‌কির হো‌সেন (৩৫) গাবতলী উপ‌জেলার রা‌মেশ্বরপুর ইউ‌নিয়‌নের জাইগুলি উত্তরপাড়া মৃত লয়া মিয়ার ছে‌লে। তিনি পেশায় রঙ মিস্ত্রির কাজ করতেন এবং তিনি মেম্বার প্রার্থী সাইদুল ইসলামের (টিউবওয়েল প্রতীক) সমর্থক হিসেবে কাজ করছিলেন।

এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গে‌ছে, ভোটগ্রহণ চলাকালে ইউপি সদস্য প্রার্থী মিঠু মিয়ার (ফুটবল প্রতীক) কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে সাইদুল ইসলামের (টিউবওয়েল প্রতীক) সমর্থকদের মা‌ঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় জাকির হোসেনকে প্রতিপক্ষের লোকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর আড়াইটার দিকে জাকির হোসেন মারা যান।

আমাদের গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় একটি ভোটকেন্দ্রে এক ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থককে ধারালো হাসুয়া দিয়ে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার বিকাল পৌনে ৩টার দিকে সাঘাটা উপজেলার জুম্মাবাড়ি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জুম্মাবাড়ি আদর্শ কলেজ কেন্দ্রের বাইরে এই ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম আবু তাহের। তিনি একই ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামের মো. ওমর আলীর ছেলে।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, ভোটগ্রহণ চলাকালে বিকাল পৌনে ৩টার দিকে কেন্দ্রের বাইরে ইউপি সদস্য প্রার্থী আইজল মিয়ার (টিউবওয়েল) সমর্থক আবু তাহেরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রাসেল আহমেদের (পাখা) কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আবু তাহেরকে একা পেয়ে রাসেলের কর্মী-সমর্থকরা ধারালো হাসুয়া দিয়ে তার গলা কেটে ফেলে। রাসেলকে উদ্ধার করে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে মারা যান।

আমাদের মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের বাচামারা ইউনিয়নের বাচামারা ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষে এক নারীর মৃত্যু হয়েছেন। ওই কেন্দ্রে বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। মৃত ৫০ বছরের ওই নারীর নাম ছলেমন খাতুন। তার বাড়ি বাচামারা গ্রামে।

শিবালয় সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তানিয়া সুলতানা ওই নারীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ করে ওই কেন্দ্রে সংঘর্ষ বাধে। এর মধ্যে পড়ে ওই নারী প্রাণ হারান। তবে তিনি কীভাবে মারা গেছেন, কোনোভাবে আঘাত পেয়েছিলেন কি না এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। মরদেহ সদর হাসপাতালে নিয়ে ময়নাতদন্ত করা হবে।

আমাদের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানায়, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় একটি কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকের হামলায় আরেক প্রার্থীর সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে।বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিংহরা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

নিহতের নাম অংকর দত্ত। তিনি ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী টিউবওয়েল প্রতীকের সমর্থক বলে জানা গেছে। অংকরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাতরী ইউনিয়নে নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান।

শেয়ার করুন