দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের তীব্রতার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বিপুল ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক বোমা মজুদের প্রতিযোগিতা। বর্তমানে এই ধ্বংসাত্মক বোমা তৈরির প্রতিযোগিতা কোথায় গিয়ে থামে তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে প্রায় সর্বমহলেই। ঠিক এমনি বাস্তবতায় পরমাণু অস্ত্রের আরও প্রসার না ঘটাতে এবং ভবিষ্যতে পরমাণু যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া থেকে নিজেদের বিরত রাখতে একমত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন। গত সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারি বাসভবন ক্রেমলিন থেকে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে পাঁচ পরাশক্তি এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, পাঁচ দেশ পরমাণু অস্ত্র এবং পরমাণু যুদ্ধের বিরুদ্ধে শপথ গ্রহণ করেছে। বিবৃতিতে পাঁচ দেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ‘আমরা নিশ্চিত করছি, পরমাণু যুদ্ধ হলে তাতে কেউই জয়লাভ করবে না, তাই এই যুদ্ধ কখনও হওয়াই উচিত না।’ আমরা তাদের এই শপথ বা বিবৃতিকে সাধুবাদ জানাই। কারণ যুদ্ধ কখনো শান্তি আনে না; বরং এর ফলাফল খুবই খারাপ হয়। বিশেষ করে শান্তি নষ্ট হয়, মানুষের অপরিসীম ক্ষতি হয়।
তবে প্রতিশ্রুতি দেওয়া পাঁচ পরাশক্তির পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া ও ইসরায়েলসহ কোনো দেশই যেন পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে পরমাণু শক্তির প্রদর্শনও সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।
পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়া এবং কৌশলগত ঝুঁকি কমিয়ে আনা অবশ্যই সময়ের দাবি। আর এ দাবি পূরণ হলে বিশ্বে আরও বেশি শান্তি ছড়িয়ে পড়বে বলেই মনে করি। যে ভাবনা নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘ধ্বংস নয় সৃষ্টি; যুদ্ধ নয় শান্তি; দুর্ভোগ নয়, মানুষের কল্যাণে আমাদের কাজ করে যেতে হবে।’ আনন্দের বিষয় হলো, বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতির জনকের এ বক্তব্য আজ বিশ্ব নেতৃবৃন্দও অনুধাবন করতে পারছে।
পরমাণু যুদ্ধ এড়াতে পাঁচ পরাশক্তি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আন্তরিক হবে- এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।