জয়ই কি শুধু শ্বাসরুদ্ধকর হয়? অনেক সময় ড্রও তো হয় জয়ের সমান। যেমনটা হলো সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ইংল্যান্ডের। অস্ট্রেলিয়ার হাতের নাগালে চলে আসা জয়কে ড্র বানিয়ে ছাড়লো সফরকারিরা। শেষ ভরসা হয়ে ছিলেন জনি বেয়ারস্টো। ইনিংসের ৯২তম ওভারে স্কট বোল্যান্ড যখন তার প্রতিরোধও ভেঙে দিলেন, ইংল্যান্ডের ড্রেসিংরুমে তখন পিনপতন নীরবতা। হাতে মাত্র ২ উইকেট। স্পেশালিস্ট ব্যাটার বলতে তো আর কেউই রইলেন না। দিনের ১০.৪ ওভার তখনও বাকি। লোয়ার অর্ডারের জ্যাক লিচ, স্টুয়ার্ট ব্রড আর জেমস অ্যান্ডারসন মিলে কি পারবেন অসি বোলারদের তোপ সামলাতে?
অসম্ভবই মনে হচ্ছিল। সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছে ইংল্যান্ড। শেষ মুহূর্তে টেস্ট বাঁচিয়ে বাঁচিয়েছে হোয়াইটওয়াশের সম্ভাবনা। অ্যাশেজে চার ম্যাচ শেষে এখন অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে রইলো ৩-০তেই।
লক্ষ্য ছিল ৩৮৮ রানের। বিনা উইকেটে ৩০ রান নিয়ে পঞ্চম ও শেষ দিন শুরু করে ইংল্যান্ড। শেষদিনে জিততে হলে আরও ৩৫৮ রান, বলতে গেলে অসম্ভবই। ইংল্যান্ড তাই দিনের শুরু থেকেই উইকেট কামড়ে থাকার চেষ্টা করছিল।
৫৮ বলে ৯ রান করা হাসিব হামিদকে সাজঘরে ফিরিয়ে ৪৬ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন বোল্যান্ড। ২৯ বলে ৪ করে নাথান লিয়নের বলে বোল্ড হন ডেভিড মালান। ওপেনার জ্যাক ক্রলি অবশ্য সতীর্থদের মতো ওতটা ডিফেন্সিভ ছিলেন না।
১০০ বলে ১৩ বাউন্ডারিতে ৭৭ রানে পৌঁছে যাওয়া ক্রলিকে এলডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন ক্যামেরুন গ্রিন। এরপর জো রুট আর বেন স্টোকসের প্রতিরোধ। ১৫২ বলে ৬০ রানের জুটি গড়েন তারা। ৮৫ বলে ২৪ রান করা রুটকে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ বানান বোল্যান্ড।
তারপর স্টোকস আর জনি বেয়ারস্টো ৩৭ রান করতে কাটিয়ে দেন ৯৯টি বল। ১২৩ বলে ৬০ রানের ইনিংস খেলা স্টোকসকে ফিরিয়ে এই জুটিটি ভাঙেন লিয়ন।
ষষ্ঠ উইকেটে জস বাটলারকে নিয়ে ৬১ বল কাটিয়ে দেন বেয়ারস্টো। ৮৫তম ওভার জোড়া আঘাত হেনে আবারও অস্ট্রেলিয়ার জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। বাটলার ৩৮ বলে ১১ আর মার্ক উড শূন্যতেই সাজঘরে ফেরেন। ২১৮ রানে ৭ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
এরপর ১০৫ বল মোকাবেলায় ৪১ করা বেয়ারস্টোকে ফিরিয়ে দলকে জয়ের আরও কাছে নিয়ে এসেছিলেন বোল্যান্ড। কিন্তু ইংল্যান্ডের লোয়ার অর্ডার তখনও ম্যাচ বাঁচানোর আশা ছাড়েনি।
অষ্টম উইকেটে জ্যাক লিচকে নিয়ে স্টুয়ার্ট ব্রড ৫২ বল খেলে আবারও লড়াই জমিয়ে তোলেন। দিনের দুই ওভার বাকি থাকতে পার্টটাইমার স্টিভেন স্মিথ লিচকে (৩৪ বলে ২৬) আউট করলে তীরে এসে তরী ডোবার শঙ্কা জেগেছিল ইংলিশদের।
কিন্তু শেষ উইকেটে ব্রড আর জেমস অ্যান্ডারসন গুরুত্বপূর্ণ ১২টি বল পার করে দেন ঠান্ডা মাথায়। ৩৫ বলে ৮ রানে অপরাজিত থাকেন ব্রড, ৬ বলে শূন্য রানে অ্যান্ডারসন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস: ৪১৬/৮ ডিক্লে. (উসমান খাজা ১৩৭, স্টিভেন স্মিথ ৬৭; স্টুয়ার্ট ব্রড ৫/১০১)
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ২৯৪/১০ (জনি বেয়ারস্টো ১১৩, বেন স্টোকস ৬৬; স্কট বোল্যান্ড ৪/৩৬)
অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস: ২৬৫/৬ ডিক্লে. (উসমান খাজা ১০১ অপরাজিত, ক্যামেরুন গ্রিন ৭৪; জ্যাক লিচ ৪/৮৪)
ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস: ২৭০/৯ (জ্যাক ক্রলি ৭৭, বেন স্টোকস ৬০, জনি বেয়ারস্টো ৪১; স্কট বোল্যান্ড ৩/৩০)
ফল: ম্যাচ ড্র।