সন্ত্রাস দমন, নিরাপত্তা সহযোগিতা ও মাদক চোরাচালান রোধে তুরস্কের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে কাউন্টার টেরোরিজম এবং সিকিউরিটি কো-অপারেশন নিয়ে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।
শনিবার (৮ জানুয়ারি) রাতে সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে দুই দেশের মধ্যে এই বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়।
সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোলাইমান সয়লু বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে দুই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এই সমঝোতা স্মারক সই হয়।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সঙ্গে খোলামেলা কথা হয়েছে। আমাদের পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার সব ডিপার্টমেন্টেই তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন এবং আমাদের কোনো প্রয়োজন থাকলে সেগুলোও তারা দিয়ে সহযোগিতা করবেন।
তিনি বলেন, আমরা ট্রেনিংয়ের কথা বলেছি, আমরা ইন্টেলিজেন্ট শেয়ারের কথা বলেছি। আমরা সাইবার ক্রাইম দমনের কথা বলেছি। আমরা কথা বলেছি, আমাদের পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবি, আনসারকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য। তারা সবগুলোতেই একমত হয়েছেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য তুরস্ক আগেও যেমন ভূমিকায় ছিল, এখন তেমন শক্ত ভূমিকায় আছে। তারা আমাদের নিশ্চয়তা দিয়ে গেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য তো বটেই, যেসব রোহিঙ্গা আছে তারা তাদের সহযোগিতা করে যাবেন।
শনিবার সকালে বাংলাদেশে একদিনের সফরে আসেন তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোলাইমান সয়লু। তিনি সকালে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের পর বিকালে ঢাকায় আসেন। বিকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর ডা. এনামুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন।
‘রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে তুরস্ক’
এর আগে সকালে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তুরস্ক সরকারের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (আফাদ) পরিচালিত ৫০ শয্যার তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেন তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সেখানে সোলাইমান সয়লু বলেন, ২০১৭ সাল থেকেই রোহিঙ্গা ভাই-বোনদের মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে তুরস্ক। সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ভবিষ্যতেও আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
পরে তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একই এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে আশ্রয়হারা রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মাণাধীন অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরদের সঙ্গে কিছুটা সময় খেলায় মাতেন। এ ছাড়া দোভাষীর সহায়তায় বিভিন্ন বয়সের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন।
এরপর ১৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তুর্কি রেড ক্রিসেন্টের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম, দিয়ানাত ফাউন্ডেশন পরিচালিত রোহিঙ্গা দ্বারা সাবান তৈরির কারখানা, খিলজাই নামে একটি সংস্থার লার্নিং সেন্টারের শিক্ষা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণসহ বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ইসমাইল ছাতাকলু, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী খালিল বল দামির, তুরস্কের দুজন সংসদ সদস্য, বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান, ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত, জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ ও পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।