ঘুষ গ্রহণ ও অর্থপাচারের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় সিলেটের সাবেক কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) পার্থ গোপাল বণিককে ৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
আজ রোববার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম পৃথক দুই ধারায় এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে তাকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় পাঁচ বছর এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। তবে দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪ (২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় দুদক অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর একই আদালতের বিচারক রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য রোববার (৯ জানুয়ারি) দিন ধার্য করেন। মামলায় বিভিন্ন সময় আদালতে ১২ জন সাক্ষ্য দেন।
২০১৯ সালের ২৮ জুলাই কারাগারের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পার্থ গোপাল বণিককে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে অভিযানে যায় কমিশন। ওই দিন বিকেলে ধানমন্ডির ভূতের গলিতে পার্থ গোপালের ফ্ল্যাট থেকে নগদ ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করে দুদক। এরপরই তাকে আটক করা হয়। পরদিন ২৯ জুলাই তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪ (২) ধারায় দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলা করে দুদক।
এরপর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ থেকে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এ বদলির আদেশ দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর সাবেক ডিআইজি পার্থের বিচার শুরু হয়। ঘুসগ্রহণ ও মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত। চার্জ গঠনের ফলে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। ওই দিন ঢাকার বিশেষ জজ-১০-এর বিচারক নজরুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। একই সঙ্গে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ওই বছরের ১৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
এরপর পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় দুদক। গত বছরের ২৪ আগস্ট দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. সালাউদ্দিন সংশ্লিষ্ট আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, উপ-মহাপরিদর্শক পার্থ গোপাল বণিক (বরখাস্ত) সরকারি চাকরিতে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুসের মাধ্যমে ৮০ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেন। এসব টাকা গোপন করে তার নামীয় কোনো ব্যাংক হিসাবে জমা না রেখে বিদেশে পাচারের উদ্দেশে নিজ বাসস্থানে লুকিয়ে রেখে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারা, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
অবশ্য ডিআইজি পার্থ দাবি করেছেন, ৮০ লাখ টাকা তার বৈধ আয় থেকে অর্জিত। এর মধ্যে ৩০ লাখ টাকা শাশুড়ি দিয়েছেন। বাকি ৫০ লাখ টাকা সারাজীবনের জমানো।
গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।