নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ বিএনপিসহ যেসব রাজনৈতিক দল বর্জন করেছে, তারা সরকারের বিরুদ্ধে ‘আন্দোলনের অভিন্ন বার্তা’ দিয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এসব দলকে নিয়ে জোটবদ্ধ হয়ে ‘সরকারবিরোধি আন্দোলনের নতুন ক্ষেত্র’ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে প্রধান সরকারবিরোধি দলটি। সংলাপে অংশ না নেওয়া দলগুলোকে নিয়ে সরকারবিরোধি নতুন জোট করার পরিকল্পনাও আছে বিএনপির। তবে বিষয়গুলোকে মোটেও গুরুত্ব দিচ্ছেন না সরকারি দল আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা।
রাজনীতির মাঠে সরকার ও আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির সংলাপ বর্জনের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই আমলে নিচ্ছেন না ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা। তাঁদের মতে, রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ না নেওয়া বিএনপির রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা হবে। অংশ না নিয়ে সংলাপকে বিতর্কিত করার যে পরিকল্পনা করছে, এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী সচেতন। রাজনীতির মাঠে নেমে জনগণকে এ বিষয়ে ‘বিভ্রান্ত’ করার মতো দক্ষতা ও নেতাকর্মী সাংগঠনিকভাবে অগোছালো বিএনপির নেই। বিষয়টি নিয়ে দলটি তাই রাজনৈতিকভাবে সুবিধা আদায় করতে পারবে না।
আওয়ামী লীগ বলছে, এবারের সংলাপে অংশ না নেওয়া দলের চেয়ে অংশ নেওয়া দলের সংখ্যা বেশি। বিএনপি বা তাদের মিত্র কোনো দল সংলাপে এলো কী এলো না, এর ওপর ফল নির্ভর করবে না। কেউ না এলেও নির্বাচন কমিশন গঠন থেমে থাকবে না, সংলাপও থেমে থাকেনি।
আগামী ১৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনুষ্ঠেয় সংলাপে আওয়ামী লীগ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে বিতর্কমুক্ত করার পরামর্শ তুলে ধরবে। গত ২০১২ ও ২০১৬ সালেও রাষ্ট্রপতি সংলাপের আয়োজন করেন। ওই দুটি সংলাপের পর গঠিত ‘সার্চ কমিটির’ মাধ্যমে ইসি গঠিত হয়। এবারও সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি ‘গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ’ ইসি উপহার দেবেন। সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি ‘স্বাধীন ও নিরপেক্ষ’ ইসি উপহার দেবেন বলে আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা।
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ এ প্রসঙ্গে মত ও পথকে বলেন- ‘রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ না নিয়ে বিএনপি আসলে আগামী নির্বাচন বানচাল করতে চায়। নির্বাচনকে বানচাল করার ষড়যন্ত্রে দলটি লিপ্ত। রাষ্ট্রপতি একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সবার মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করার লক্ষ্যে সংলাপের আয়োজন করেছেন, যা বিএনপি কখনো করেনি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি সংলাপের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। কারণ, দলটির উদ্দেশ্য হচ্ছে আগামী নির্বাচনকে বানচাল করা। তারা যেভাবে ২০১৪ সালে নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল, ২০১৮ সালে নির্বাচনে ষড়যন্ত্র করেছিল, একইভাবে তারা আগামী নির্বাচনটাকে বানচাল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের সেই সুযোগ দেবে না।’
সংলাপ বর্জন করা দলগুলোকে নিয়ে ‘বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট’ করার প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী মত ও পথকে বলেন, ‘দেশকে বাঁচানো, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরে পাওয়া, পুনরায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলনের একটি বড় প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। আমরা সবাই অভিন্ন চিন্তা থেকে সংলাপকে প্রত্যাখ্যান করেছি। গণতন্ত্রের স্বার্থে সমঝোতা করে হলেও সরকারবিরোধি আন্দোলনে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে পাশে চায় বিএনপি।’
অন্যদিকে ১৭ জানুয়ারি বিকেল চারটায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে আওয়ামী লীগ আমন্ত্রিত। এতে দলের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সাধারণ সম্পাদকসহ জ্যেষ্ঠ নেতারাও প্রতিনিধিদলে থাকবেন।
এখন পর্যন্ত যতগুলো দল সংলাপে অংশ নিয়েছে, তাদের সবাইকে ৭ বা ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে বঙ্গভবনে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ ১০ জনের প্রতিনিধি দল নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ও সরকারের সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের সংলাপের আগে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন দলের সংলাপের সূচি নির্ধারিত হয়েছে। মাঝখানে ফাঁকা আছে ১৪, ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি। ১৬ জানুয়ারি সংসদের নতুন বছরের অধিবেশন বসছে এবং ওই দিন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট নেওয়া হবে। ফলে ওইদিন আর কোনো দলকে সংলাপে ডাকার সম্ভাবনা কম। এছাড়া ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি অবস্থা বুঝে কোনো দলকে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগের পর আর কোনো দলকে সংলাপে ডাকার সম্ভাবনা নেই।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নতুন ইসি গঠনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি সংলাপ শুরু করেন গত ২০ ডিসেম্বর থেকে। এ পর্যন্ত ৩২টি দলকে সংলাপে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। সর্বশেষ আমন্ত্রণ পায় আওয়ামী লীগ।