করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের ঘোষিত বিধিনিষেধের উদ্দেশ্য নিয়ে ‘অভিযোগ ও প্রশ্ন’ তুলেছে বিএনপি। সরকারবিরোধি রাজনৈতিক দল বিএনপির অভিযোগের জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতৃত্বের সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে বিধিনিষেধ জারির যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে একাধিকবার। এরপরও বিষয়গুলোকে ‘বিতর্কের’ মধ্যে রাখতে চাইছে বিএনপি। করোনা রোধ করতে সরকারের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে এভাবে ‘রাজনৈতিক বিতর্ক’ হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তাঁরা বলছেন, ভয়ানক আকারে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়া রোধে ও জনগণের স্বাস্থ্য বিবেচনায় বিভিন্ন দেশের সরকার নানা বিধিনিয়ম জারি করছে। এ দেশের সরকার সময়োপযোগী ও চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্মত সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনো সঠিক পথে হাঁটছে। সব রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতাকর্মীর উচিত হবে ১৩ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হতে যাওয়া নিয়মনীতিগুলো পালনে সরকারকে সহায়তা করা। একটা দলের রাজনীতি এমন অনাকাঙ্ক্ষিত হওয়া উচিত নয়, যা জনস্বাস্থ্য নিয়ে ‘ছিনিমিনি খেলার মতো’। যে কোনো দলের রাজনীতিই নির্মম ও দ্বিমুখি নীতির অপরাজনীতি হওয়া অনুচিত।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা- আগেভাগে সরকার সতর্ক না হলে দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই ১৩ জানুয়ারি থেকে দেশের উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও সমাবেশ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় সরকার। এরপর বিএনপির অভিযোগ ও আওয়ামী লীগের পক্ষে জবাব দেওয়া চলছে গত কয়েকদিন ধরে। পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস ঠেকাতে সরকারের নির্দেশিত বিধিনিষেধ নিয়ে সরকারবিরোধি দলের উত্তেজনা ছড়ানোর এ ‘রাজনীতির’ চর্চা আর কোনো দেশে নেই।
সরকারের জারি করা নতুন নির্দেশনার বিষয়গুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করেন করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি মত ও পথকে বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন- ‘আমার অতীত অভিজ্ঞতা বলে নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। সেজন্য সরকারকে বেশি বেশি অভিযান পরিচালনা করতে হবে। দ্রুত সব মানুষকে টিকার আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে। মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে।’
যোগাযোগ করলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করোনার সংক্রমণ আরো দ্রুত বাড়বে। যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, সেগুলো সঠিকভাবে মানা হলে সংক্রমণ হয়তো কম থাকবে। না হলে সামনে হয়তো কঠোর বিধিনিষেধ দিতে হবে। তাই নিজেদের প্রয়োজনেই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এ বিষয়ে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা আসলে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। করোনা রোধের বিধিনিষেধ নিয়ে তাঁরা জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। করোনা প্রতিরোধের জন্য সরকার কিছু বিধিনিষেধ জারি করেছে। সেটি নিয়ে বিএনপি বলছে, তাদের সমাবেশ বন্ধ করতে সরকার বিধি-নিষেধ দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পত্রিকা মারফত জানতে পেরেছি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এতে বোঝা যাচ্ছে, দেশে করোনার ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এ মহামারী থেকে জাতিকে রক্ষা করার জন্য বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে।’
কোভিড-১৯ এবং ওমিক্রনের সংক্রমণ বিস্তার রোধে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সমাবেশ বন্ধের সিদ্ধান্ত ‘অযৌক্তিক’ বলে দাবি করছে বিএনপি। দলটির অভিযোগ, তাদের সমাবেশে ‘মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেওয়া বাধাগ্রস্ত’ করতে সরকার করোনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। গত ১০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব মত দেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করেন- আসছে ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে। এ আশঙ্কা থেকে সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। টিকা দেওয়ার কার্যক্রম আরও বাড়ানো গেলে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে নতুন বিধিনিষেধ জনস্বাস্থ্যের জন্য ফল বয়ে আনবে। গত বছরের আগস্টে দেশব্যাপী করোনার গণটিকা দেওয়ার পর দেশে সংক্রমণ কমতে থাকে। চলতি মাসে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে।
বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে রোগী শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ৯১৬ জন। এ সময় করোনা আক্রান্ত চারজনের মৃত্যু হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। প্রসঙ্গত, ১৩ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সরকারের বিধিনিষেধের সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে। পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়ার আগ পর্যন্ত তাই সব ধরনের সভা-সমাবেশ বন্ধ থাকবে।