বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকীকরণ করতে চেয়েছিলেন অর্থাৎ তিনি একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে চেয়েছিলেন। আর সেজন্যই তিনি নিহত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু যদি সেটি করে যেতে পারতেন তাহলে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যেত। আমরা কিন্তু এখন একমুখী শিক্ষার আওয়াজটাই তুলতে পারি না। আমি মনে করি, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যতক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত এদেশের মানুষের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন আসবে না। আমাদের বুঝা উচিত- আমি নামাজ পড়ি,রোজা রাখি..যা করি না কেন আমার ভাইয়েরা-ই তো চন্দ্রগামী, মঙ্গলগামী। আমার যদি এটাকে স্বাগত জানানোর মতো মানসিকতা না থাকে তাহলে তো আমি পথ চলতে পারব না।
১১ জানুয়ারী (মঙ্গলবার) দি ডেইলি স্টার ভবনে ‘আদিবাসীর অধিকার: বাংলাদেশের আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় আইএলও কনভেনশন ১০৭ ও ১৬৯-এর ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি ১০৭ ও ১৬৯ ধারাকে পূর্ণ সমর্থন করেন।
শুধু আদিবাসী নয় সারাদেশেই ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য বিরাজমান রয়েছে বলে মন্তব্য করে মোকতাদির চৌধুরী বলেন, যাদের পক্ষে শক্তিশালী গোষ্ঠীর ক্ষমতা বা চাপ ক্রিয়াশীল থাকে আইন তাদের জন্য এক ভাষায় কথা বলে আবার যাদের পক্ষে ঐসব গোষ্ঠীর প্রভাব থাকে তাদের জন্য আইন ভিন্ন ভাষায় কথা বলে।
বাংলাদেশে আইন যে সব নাগরিকের জন্য সমান নয় সেই দিকটি বুঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি একজন প্রবীণ এমপি, শুধু তাই-ই আমি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব ছিলাম। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডবের পর আমি যখন মামলা করতে গিয়েছি তখন দুইজন মন্ত্রী টেলিফোন করে আদালতকে বলেছেন ওনার মামলা নিবেন না এবং মামলা নেয়নি। অপরাধ কী? যারা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙেছে তাদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করতে চেয়েছিলাম। এই হলো আমাদের অবস্থা।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ টিকে থাকবে। সকল মানুষকে একত্র করে বাংলাদেশকে টিকিয়ে রাখতে হবে। এখানে ধর্ম-বর্ণ যা-ই থাক না কেন ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’ এই দর্শনকে সামনে নিয়ে আসলে আমরা সকলে ভালো থাকতে পারব।
তিনি আরও বলেন, বাঙালি, আদিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সকলে মিলে আমরা দেশটাকে স্বাধীন করেছি। আজকে মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছরের পরে আদিবাসীদের অধিকারের কথা বলতে এসে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি লজ্জা পাই।
আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান উপদেষ্টা রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে (ভার্চুয়াল) অনুষ্ঠিত সভায় সংহতি জ্ঞাপন করেন অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, সাংবাদিক সোহরাব হাসান, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, আইএলও’র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর অ্যালেক্স চিসাম,। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কাজল দেবনাথ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মিজ. জান্নাত-এ-ফেরদৌসী, টেকনোক্র্যাট সদস্য ও যুগ্ম-সমন্বয়ক, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাস।
অনুষ্ঠানে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাসের টেকনোক্র্যাট সদস্য সঞ্জীব দ্রং। ধারণাপত্রের আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়ঃ-
১. আদিবাসীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ অধিকারসহ সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশে বিশেষ পদক্ষেপ (স্পেশাল মেজার্স) গ্রহণ।
২. আইএলও কনভেনশন নং ১০৭ এর আলোকে আইন প্রণয়ন করা এবং পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় প্রতিশ্রতি অনুযায়ী আইএলও কনভেনশন নং ১৬৯ অনুসমর্থন করা।
৩. আদিবাসী মানুষের জমি-জলা-বনভূমি অধিকার নিশ্চিতকরণে স্থানীয় সরকার, স্থানীয় শাসন ও ঐতিহ্যগত শাসন কাঠামোর সর্বোচ্চ সমন্বিত পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি।
৪. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি অধিকারসহ উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে জাতীয় সংসদে বিশেষ অধিবেশনে আলোচনাপূর্বক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সময়-নির্দিষ্ট (টাইম-বাউন্ড গোলস) লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে দায়িত্ব বন্টন করার বিষয় ভাবা যেতে পারে।
৫. আদিবাসীদের প্রথা ও ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকারের আইনগত স্বীকৃতি দেয়া জরুরি।
৬. সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা।
৭. বনের আদিবাসীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ বন্ধ করা ও বনবিভাগের হয়রানি মামলা প্রত্যাহার করা উচিত।
৮. ইকো-পার্কের নামে বন উজাড় বন্ধ করা জরুরি। সেই সাথে বিশ্বব্যাপী “ক্লাইমেট চেঞ্জ”-এর ঋণাত্মক প্রভাব থেকে মুক্ত হবার লক্ষ্যে আদিবাসী মানুষ অধ্যুষিত বন-জঙ্গল-জলাভূমি সংরক্ষণে সহায়ক গবেষণা ও এডভোকেসীসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম জোরদার করা জরুরি।
৯. জাতিসংঘ আদিবাসী অধিকার আইন বাস্তবায়ন করা।
১০. এসডিজি থিম লীভ নো ওয়ান বিহাইন্ড বাস্তবায়নে আদিবাসীদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।