শেখ কামাল নামটি শুনলেই স্মৃতিকাতর হই: মোকতাদির চৌধুরী

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, শেখ কামাল নামটি যখন উচ্চারিত হয় তখন আমি অধিক স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। আমি তাঁর খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলাম। রাজনীতিতে তাঁর সাথে আমার চেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক খুব কম মানুষেরই ছিল। সেসময়ে ঢাকা শহরে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে যতগুলো প্যানেল হয়েছে- সেটি কলেজের হোক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়েরই হোক সমস্ত ছাত্র সংসদ প্যানেলের পরিচিতি আমার হাতে লেখা। সবকিছুই তাঁর পরামর্শে করতাম। কাজেই তাঁর সঙ্গে আমার অন্যরকম একটা সম্পর্ক ছিল যেজন্য আমি এই নামটি শুনলেই স্মৃতিকাতর হই।

বুধবার (১২ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামাল ও ১৯৭৫ সালে তাদের সপরিবারে হত্যার পরবর্তী ঘটনা নিয়ে লেখা ‘স্মৃতিতে শেখ ও পঁচাত্তর পরবর্তী ঘটনা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গ্রন্থটি লিখেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত সুইডিশ রাজনীতিবিদ মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, শেখ কামালের সঙ্গে আমার যদি সাক্ষাৎ না হতো, আমি আদৌ ছাত্রলীগ করতাম কিনা এবং মুক্তিযোদ্ধা হতাম কিনা আমি জানতাম না। কিন্তু যেদিন তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল- মাদ্রাসা পড়ুয়া উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ছাত্রলীগ করল, ছাত্র সংসদের জিএস হলো এবং মুক্তিযোদ্ধা হলো।

তিনি বলেন, শেখ কামালের সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল আন প্যারালাল। বাংলাদেশের এমন কোনো জেলা, এমন কোনো মহকুমা শহর ছিল না যেখানে তাঁর নিজস্ব ভক্ত ছিল না। অনেই তাকে ছাত্রলীগের কমান্ডার হিসেবে সম্বোধন করত। তিনি দুইবার ছাত্রলীগকে রক্ষা করেছিলেন।

পঁচাত্তর পরবর্তী প্রতিরোধ যোদ্ধা মোকতাদির চৌধুরী আরও বলেন, শেখ কামাল অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করতেন। আমার জীবনে বহু রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে, তাদের সন্তানদের দেখার সৌভাগ্য হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে শেখ কামালের যে একটা অনন্যসাধন অবস্থা সেটি আর কারো মধ্যে দেখিনি। তাঁকে কখনো আমরা প্রধানমন্ত্রীর সন্তান বা প্রেসিডেন্টের পুত্র হিসেবে দেখার তো দূরের কথা, এমনকি জাতির পিতার পুত্র এটাও বোধহয় দেখি নাই। আমরা তাঁকে আমাদের মতো একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ ছাত্র, সাধারণ সন্তান, সাধারণ বন্ধু হিসেবে চিনতাম। এতো সাধারণ জীবনযাপন তাঁর ছিল যেটা আজকাল খুবই ব্যতিক্রম। আজকে আমার সন্তানকে যদি এভাবে জীবনযাপন করতে বলি, সে ঐভাবে জীবনযাপন করবে কিনা আমার সন্দেহ আছে।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে লেখক মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু বলেন, বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ভাইকে নিয়ে বইটি লিখেছি। সেই সময় কাছ থেকে দেখা শেখ কামাল ভাইয়ের কিছু ঘটনা তুলে ধরেছি এতে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা। সেই সূত্রে কামাল ভাইকে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তখন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শেখ কামাল ভাই ও ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সৈয়দ নুরুল ইসলাম ভাইয়ের সহায়তা, অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ সবসময় আমার সঙ্গে ছিল।

ডাবলু উল্লেখ করেন, মাত্র ২০ বছর বয়সে জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক আইনে গ্রেফতার ও নির্যাতনের ভয়ে ১৯৭৭ সালের ১৮ জানুয়ারি আমি বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে আমার এখন কোনও সম্পর্ক নেই। ২৫ বছর থেকে সুইডেনের মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও আমার জন্মভূমি বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন আমাকে আনন্দিত করে।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ নেতা ইসমত কাদির গামা, সাবেক রাষ্ট্রদুত মমতাজ হোসেন, সাবেক সচিব খন্দকার শওকত হোসেন জুলিয়াস, শেখ কামালের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা-সহ লেখকের ৭২-৭৬ ছাত্র রাজনীতির সাথী, ভাই ও বোনেরা।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মুক্তিযুদ্ধ সংহতি পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাজমা কাওসার।

শেয়ার করুন