যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গাঢ় হচ্ছে বাংলাদেশের

হাসান শান্তনু

ফাইল ছবি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক গাঢ় হচ্ছে দিনে দিনে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলের আগামী দিনগুলোয় মার্কিন ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো গাঢ় হওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা দেখছেন দুই দেশের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। বিনিয়োগের অন্যতম ‘সম্ভাবনাময় গন্তব্য’ হিসেবে বাংলাদেশকে মনে করছেন মার্কিন বিনিয়োগকারীরা।

দেশটির প্রতিষ্ঠিত ও বিশ্ব পরিচিত কোম্পানিগুলো এ দেশে বিনিয়োগে অনেক মনোযোগ বাড়িয়েছে। তাদেরকে বিনোয়োগে আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশের সরকারও নানা উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি নিয়মনীতিতে পরিবর্তনের কথা ভাবছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাম্প্রতিক এক নথিতে এসব পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নথি বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত এক দশকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বাংলাদেশের অর্থনীতি। দেশের অভ্যন্তরীণ শ্রমশক্তিও ক্রমে বড় হচ্ছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বড় বাজারগুলোর ঠিক সন্ধিস্থলে অবস্থান হওয়ায় এখানে কৌশলগত সুবিধাও অনেক বেশি। পাশাপাশি এ দেশের বেসরকারি খাত অনেক বেশি প্রাণবন্ত ও শক্তিশালী।

নথিতে আরো উল্লেখ আছে, এফডিআই আকর্ষণে বাংলাদেশের সরকার অনেক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এর বিপরীতে বিনিয়োগের বাধাগুলো একটু একটু দূর হচ্ছে। এমনকি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের আঘাত সত্ত্বেও সামনের দিনগুলোয় বিনিয়োগকারীদের জন্য আরো আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

‘আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের’ (অ্যামচেম) ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য শীর্ষ দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র। সব দিক বিবেচনায় দুই দেশের সম্পর্কটা অনেক শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আগামী দিনগুলোতেও দুই দেশের সম্পর্কে আরো ইতিবাচক গভীরতা দেখা যাবে বলে প্রত্যাশা করছি।’

তথ্য বলছে, গত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক কেনা বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। এমনকি করোনাকালে গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি বাড়ে ১৮ শতাংশের বেশি। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে সফল উদ্যোগ নেওয়ায় বিষয়টি সম্ভব হয়েছে। শুধু পোশাক রফতানি নয়, এফডিআই, গ্যাস ও বিমাসহ বেশকিছু খাতের প্রধান অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি মার্কিন আগ্রহেই এ দেশের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে জাপান। বিনোয়োগ আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন জাপানের বিনোয়োগকারীরা।

বাংলাদেশে সামাজিক উন্নয়নের নানা খাতে নিজেদের উপস্থিতি বড় করে তুলছে মার্কিনী প্রতিষ্ঠান ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’। গত দুই দশকে বাংলাদেশে এ দাতব্য সংস্থার অর্থায়ন পেয়েছে দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, শিক্ষা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও নারী উন্নয়নকেন্দ্রিক বিভিন্ন প্রকল্প। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ২০০০ সালে বাংলাদেশের কোনো প্রকল্পে প্রথম অর্থায়ন করে ওই প্রতিষ্ঠান।

২০২০-২১ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৬৯৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। এর অধিকাংশই ছিল বস্ত্র ও তৈরি পোশাক। ওই অর্থবছরে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়ে ব্যাপক হারে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট আমদানির প্রায় পাঁচ শতাংশ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ওই বছর দেশে দুইশত ১২ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থমূল্যের মার্কিন পণ্য আমদানি হয়।

দেশের গ্যাস উত্তোলন খাতের একমাত্র মার্কিন কোম্পানি শেভরন। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি রয়েছে ২০৩৩-৩৪ সাল পর্যন্ত। শেভরনও বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এ দেশে এফডিআইয়ের সবচেয়ে বড় উৎস যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর শেষেও দেশের মোট এফডিআইতে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর অবদান প্রায় ২০ শতাংশ। এভারকেয়ারে বিনিয়োগ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এভিয়েশন খাতে ড্রিমলাইনারগুলোর সব এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬৯৭ কোটি ডলারেও বেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করে বাংলাদেশ।

মার্কিন বীমা কোম্পানি মেটলাইফে এখন বাংলাদেশে ১৬ হাজারেরও বেশি কর্মী কাজ করছেন। দেশের বিমা খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ২৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি। দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক চিকিৎসা উপকরণ ও যন্ত্রেরও উৎস যুক্তরাষ্ট্র। এর বাইরে দেশের এভিয়েশন খাতেও যুক্তরাষ্ট্রের অবদান রয়েছে।

এলডিসি’ বা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে এখনো উন্নত দেশগুলোয় শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বের হওয়ার পরের তিন বছর এ সুবিধা পাবে।

এরপর দেশের পণ্য রপ্তানির বিপরীতে শুল্ক সুবিধা পাবে না। সরকার তাই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি করার কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘ট্রেড এন্ড ইনভেষ্টমেন্ট কো-অপারশেন ফোরাম এগ্রিমেন্ট’ (টিকফা) করার উদ্যোগ নিচ্ছে ঢাকা। দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্যের প্রস্তাবটি তুলতে পারে টিকফার আগামী বৈঠকে তোলা হবে।

শেয়ার করুন