‘ধরিয়ে দিতে’ ইন্টারপোলের নোটিশ ঝুলছে, সরাতে আবেদন নেই
একুশে আগস্টের ভয়াল ও নৃশংস গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির নেতা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নয় দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের কাছে মৃত্যুর বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। হারিছের পরিবারের পক্ষে এ সংবাদ নিশ্চিত করতে এখনো কেউ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তবে পুলিশের ‘অপরাধ তদন্ত বিভাগ’ (সিইডি) বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছে। তাদের তদন্তের পর এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
হাওয়া ভবনের প্রভাবশালী নেতা ও আলোচিত বিভিন্ন মামলার ‘পলাতক আসামি’ হারিছ চৌধুরীকে ‘ধরিয়ে দিতে’ একপর্যায়ে দেশের পুলিশ আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে সহায়তা চায়। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারপোল তাদের ওয়েববসাইটে তার ছবি, পরিচয়সহ বিস্তারিত লিখে নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়। পলাতক আসামি বা দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক কেউ মারা যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করা হলে ইন্টারপোল রেড নোটিশ থেকে তার নাম কেটে দেয়, ওয়েবসাইট থেকে ছবি মুছে দেয়। ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে তার নামে এখনো নোটিশ ঝুলছে। তা মুছে দিতে সংস্থাটির কাছে কেউ আবেদন করেননি।
হারিছ চৌধুরী ‘দেশেই ছিলেন, তিনি মারা যান ঢাকায়’- পরিবারের এমন দাবির বিষয়ে বক্তব্য জানতে পুলিশের নানা স্তরের কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কথা বলতে রাজি হননি। তারা বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলা হয়নি।
দেশের পুলিশের হয়ে ইন্টারপোলের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে যোগাযোগ ও কার্যক্রম চালায় পুলিশ সদর দপ্তরের ‘ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো’ (এনসিবি) শাখা। হারিছকে ‘ধরিয়ে দিতে’ এখনো ইন্টারপোলে রেড নোটিশ থাকার বিষয়ে ব্যুরোর সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম বলেন, ‘ওই আসামি মারা গেছেন কী না, এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই। তার মৃত্যুর সংবাদ পড়েছি গণমাধ্যমে। এ ব্যাপারে তদন্ত করে বিষয়টি নিশ্চিত হতে সিআইডিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা মত ও পথকে এ ব্যাপারে বলেন- ‘হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদ, ঢাকায় আত্মগোপনে থাকার বিষয়টি পত্রিকায় দেখেছি। হতে পারে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিতর্কিত করতে এটা অশুভ কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠীর আরেকটা নতুন চাল।’
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে কীভাবে নতুন রাজনৈতিক চাল’ জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন- ‘নিজেকে গোয়েন্দা বাহিনীর চৌকষ কর্মকর্তাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে রেখে দেশের ভেতরে বহুল আলোচিত এক ব্যক্তি কীভাবে ১৪ বছর আত্মগোপনে ছিলেন, এ প্রশ্নের উত্তরে মানুষ পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কথিত ব্যর্থতার কথা বলবে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র্যাব) বর্তমান ও প্রাক্তন ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এ পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে দায়িত্বে ব্যর্থতার গল্প ছড়াতে পারলে তা আলোচনার জন্ম দেবে।’
হারিছ এতোদিন দেশে ‘আত্মগোপনে থাকার তথ্যটি সঠিক নয়’ দাবি করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘হতে পারে, তিনি মারা যাওয়ার কয়েক মাস আগে দেশে ফিরেন। এটা নানা দেশেই পুলিশ, গোয়েন্দার নজর এড়িয়ে ঘটা সম্ভব। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ বিদেশে পলাতক ছিলেন। ২০২০ সালে গোপনে দেশে এলে কয়েক মাসের মধ্যেই গ্রেপ্তার হন, তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।’
ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপির দোর্দণ্ড প্রতাপশালী নেতা হারিছের ঢাকায় মৃত্যু ও লাশ দাফন, দেশে দীর্ঘ বছর ধরে তার ‘আত্মগোপনে’ থাকার কথাগুলো গত ছয়-সাতদিন ধরে দেশীয় সংবাদমাধ্যমে শুধু আলোচিত হচ্ছে। তার প্রবাসী মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী জাতীয় একটি দৈনিকের সম্পাদককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন- তার বাবা করোনাভাইরাসসহ একাধিক রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। তিনি আসামে, বা যুক্তরাজ্যে যাননি। বাংলাদেশেই ‘আত্মগোপনে’ ছিলেন। তবে কোথায়, কীভাবে ছিলেন, বাবার লাশ কোথায় দাফন হয়েছে- তা তিনি সাক্ষাৎকারে খোলাসা করেননি।