এটিএম কার্ড জালিয়াতি: আন্তর্জাতিক চক্রের দুই সদস্য ঢাকায় গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাকান ও তার সহযোগী মফিউল

রাজধানী ঢাকায় একটি ব্যাংকের বিভিন্ন বুথ থেকে তিন দিনে ৮৪ বার টাকা তোলার চেষ্টার পর এটিএম কার্ড জালিয়াতির আন্তর্জাতিক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারদের মধ্যে তুরস্কের নাগরিক হাকান যানবুরকান (৫৫) এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় দুই বছর আগে একবার ভারতে গ্রেপ্তারের পর পালিয়েছিলেন। অপরজন বাংলাদেশের মো. মফিউল ইসলাম।

রাজধানীর গুলশান-১ নম্বর এলাকা থেকে মঙ্গলবার তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)ইউনিট।

বুধবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

তিনি জানান, তুরস্কের নাগরিক হাকান আন্তর্জাতিক এটিএম কার্ড ক্লোনিং এবং স্ক্যামিং চক্রের অন্যতম পরিকল্পনাকারী। গত ৩১ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশে আসেন এবং পল্টন এলাকায় হোটেল ‘দ্য ক্যাপিটালে’ ওঠেন।

আসাদুজ্জামান বলেন, গত ২ থেকে ৪ জানুয়ারি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন এটিএম বুথে গিয়ে তিনি বিভিন্ন দেশের একাধিক ক্লোন কার্ড ব্যবহার করে ৮৪ বার টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যাংকটি অ্যান্টি স্ক্যামিং টেকনোলজি ব্যবহার করায় অ্যালার্ম সিস্টেমের মাধ্যমে বিষয়টি নজরে আসে এবং স্ক্যামিংয়ে বাধা দিতে সক্ষম হয়।

অস্ট্রেলিয়া, নিউজল্যান্ড, ইউএসএ, ইন্ডিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব, অস্ট্রিয়া, জার্মানি, ভিয়েতনাম, যুক্তরাজ্য, কানাডা, বলিভিয়া, স্পেন, ফিনল্যান্ড, নরওয়েসহ প্রায় ৪০ টি দেশের নাগরিকের ক্রেডিট কার্ড ক্লোন করে তিনি এ চেষ্টা চালান।

সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, গ্রেপ্তার দুজনের কাছ থেকে বিভিন্ন মডেলের পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, ১৫টি ক্লোন কার্ডসহ মোট ১৭টি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, তুরস্কের নাগরিক হাকান ২০১৯ সালে ভারতের আসাম রাজ্যের পল্টন বাজার পুলিশ স্টেশনের এটিএম বুথ স্ক্যামিং মামলায় অন্য এক তুরস্কের নাগরিক এবং দুই বাংলাদেশিসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সেই ঘটনায় গ্রেপ্তাররা ভারতের বিভিন্ন এটিএম বুথ থেকে কার্ড ক্লোনিং করে প্রায় ১০ লাখ রুপি আত্মসাৎ করেন।

আসাদুজ্জামান জানান, গ্রেপ্তার হাকান ভারতে প্রায় ২০ মাস জেলে থাকার সময় আগরতলার ‘গোবিন্দ বল্লভ পন্থ’ হাসপাতালে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় পালিয়ে যান। পরবর্তীতে হাকান এক ভারতীয়ের সাহায্যে দুই লাখ রুপির বিনিময়ে সিকিম হয়ে নেপালে পৌঁছান। সেখান থেকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে নিজ দেশ তুরস্কে ফিরে যান এবং নতুন পাসপোর্ট তৈরি করেন।

এই চক্রে একাধিক বাংলাদেশিসহ তুরস্ক, বুলগেরিয়া, মেক্সিকো, ভারত ছাড়াও বিভিন্ন দেশের নাগরিক জড়িত আছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

গ্রেপ্তারদের দুজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানায় সিটিটিসি।

শেয়ার করুন