বেসিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত নিয়ে ক্ষোভ জানাল হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বেসিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে করা মামলায় অর্থ আত্মসাতের গতিপথ (ফলো দ্য মানি) খোঁজা নিয়ে দুদকের কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বেসিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে দায়ের করা মামলাটির তদন্ত ছয় বছরেও শেষ করতে দুদক ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য হাইকোর্টের।

আজ বৃহস্পতিবার মামলার আসামি বেসিক ব্যাংকের শান্তিনগর শাখার তৎকালীন ম্যানেজার মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর জামিনের বিষয়ে প্রকাশিত রায়ে হাইকোর্ট এ মন্তব্য করেন।

universel cardiac hospital

এর আগে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চের স্বাক্ষরের পর রায়টি প্রকাশ হয়।

২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পল্টন থানায় ছয় জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করা হয়। তাতে বেসিক ব্যাংকের শান্তিনগর শাখা থেকে বেআইনিভাবে ৪৮ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ আনা হয়। অন্যতম আসামি ছিলেন ব্যাংকটির শান্তিনগর শাখার প্রধান মোহাম্মদ আলী চৌধুরী।

আদালত রায়ে আরও বলেছেন, এই মামলায় ২০১৫ সালে এজাহার হয়। প্রায় ছয় বছর পার হতে চললেও কমিশন মামলার তদন্ত সম্পন্ন করতে ব্যর্থ।

আদালত আরও বলেন, কমিশন মামলার তদন্তে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানিলন্ডারিং (এপিজি)-এর নির্দেশনা অনুসরণ করছে বলে দাবি করছে। হলফনামাদৃষ্টে আরও মনে হয়, আত্মসাৎকৃত টাকার গতিপথ শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত কমিশনের পক্ষে মামলার তদন্তও সমাপ্ত করা সম্ভব নয়। আদালত ক্ষোভ, হতাশা ও দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছে, কমিশনের এহেন বক্তব্য আদালতের কাছে বিভ্রান্তিকর মনে হয়েছে।

আদালতের মতে, এই মামলায় তদন্তের মূল বিষয় হওয়া উচিত ছিল সরকারি কর্মচারী হিসেবে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ এবং অপরাধমূলক অসদাচরণ সংঘটিত হয়েছে কিনা তা দেখা। আত্মসাৎকৃত অর্থের গতিপথ শনাক্ত করা অপরিহার্য বা বাধ্যতামূলক শর্ত হতে পারে না। মামলাটি অর্থপাচারের অধীনেও নয়। দণ্ডবিধির ৪০৫ ধারা অনুযায়ী অভিযুক্তরা তাদের নিকট জিম্মাকৃত কিংবা অধীনে থাকা অর্থের ক্ষেত্রে বিশ্বাসভঙ্গ করেছে কিনা, এটাই মুখ্য।

এর আগে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বেসিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে অন্তত ৫৬টি মামলা হয়। এরমধ্যে একটি মামলা ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দায়ের করা হয়। যার তদন্ত এখনও শেষ করতে পারেনি দুদক। ফলে এ মামলার আসামি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন।

পরে ২০২১ সালের ১৪ মার্চ হাইকোর্ট এ মামলার আসামির জামিন বিষয়ে রায় প্রদান করেন। ওই মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতে আদালত তাদের পর্যবেক্ষণ দেন।

মামলাটিতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও মো. সগির হোসেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

শেয়ার করুন