নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য যে আইনের খসড়া আগামীকাল রোববার সংসদে ওঠার কথা তাতে অনেক অপূর্ণতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ.টি.এম. শামসুল হুদা। তিনি বলেন, আপাতত দৃষ্টিতে মনে হয় এটি শুধু সার্চ কমিটি গঠনের জন্য। সত্যিকার অর্থে বর্তমান সংসদে জনপ্রতিনিধিত্ব নেই, তাই প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতে খসড়া আইনটি চূড়ান্ত করা উচিত। সর্বোপরি এই আইনটি যাতে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আজ শনিবার ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে এফডিসিতে ‘গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
প্রস্তাবিত আইন সম্পর্কে শামসুল হুদা বলেন, একটি ভালো আইনের জন্য প্রয়োজনে সময় নেওয়া যেতে পারে। তাড়াহুড়া করে ত্রুটিপূর্ণ আইন প্রণয়ন কারো জন্যই কল্যাণকর হবে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও অযগ্যোতা সুষ্পষ্ট রূপরেখা থাকতে হবে। যাদের সম্পর্কে অভিযোগ রয়েছে তাদেরকে বিবেচনায় না নেওয়া উচিত।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনাররা কোনো দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে তাদের আইনানুগ বিচার হওয়া উচিত। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, তাই কোনো বিশেষ পদধারী ব্যক্তির অপরাধের বিচারের জন্য ইনডেমনিটি থাকা উচিত নয়।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সদিচ্ছা থাকলে ভালো নির্বাচন করতে পারতো। তাদের পারফর্মেন্স সন্তোষজনক নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য সুখকর না হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন অধিকতর গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
এ.টি.এম. শামসুল হুদা আরও বলেন, গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন খুবই জরুরি। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে গত ৫০ বছরে দেশে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য কোনো আইন তৈরি হয়নি। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে সুশাসন ব্যাহত হয়। দুর্নীতির কারণে সরকারি কর্মকর্তাদের শাস্তির ঘটনা খুবই কম। অথচ পাকিস্তান আমলেও সিভিল সার্ভিসে অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের শাস্তি হতো।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ নির্বাচনকালীন সরকারে অন্তর্ভুক্তির জন্য অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাইয়িদ এবং ড. এ.টি.এম. শামসুল হুদার নাম প্রস্তাব করেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২ কে জনবান্ধব ও সুশাসনের সহায়ক করতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান ছয় দফা সুপারিশ প্রদান করেন-
১। ইসি গঠনে সার্চ কমিটিতে সংসদে সরকারি দল, বিরোধী দল ও সংসদ সদস্য সংখ্যার ভিত্তিতে তৃতীয় প্রতিনিধিত্বকারী দলের একজন করে সংসদ সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা।
২। নির্বাচনসংক্রান্ত কাজে সম্পৃক্ত সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে ইসি গঠনে তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা।
৩। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিরূপণের মেকানিজম আইনের অন্তর্ভুক্ত রাখা। যাতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অবস্থান সমুন্নত রাখার মতো সৎসাহস ও দৃঢ়তাসম্পন্ন ব্যাক্তিরা নির্বাচন কমিশনে অন্তর্ভুক্ত হন।
৪। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সার্চ কমিটি যেসব ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে, সেসব নাম ও তাদের জীবনবৃত্তান্ত ওবেসাইটে প্রকাশ করা। যাতে তাদের সম্পর্কে গুরুতর কোন অভিযোগ থাকলে তা নাগরিকরা জানাতে পারে।
৫। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনাররা আর্থিক অনিয়ম, অনৈতিক কাজে সম্পৃক্ততা এবং পক্ষপাতমূলক নির্বাচন করলে কী ধরনের শাস্তি প্রযোজ্য হবে নির্বাচন কমিশন আইনে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা উল্লেখ করা।
৬। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের অনিয়ম বা অপরাধ বিচারের ক্ষেত্রে কোনো রকম বিশেষ শিথিলতা বা ইনডেমনিটির বিধান না রাখা।
প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনলোজির বিতার্কিকদের পরাজিত করে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক আরাফাত আলী সিদ্দিক ও সাংবাদিক আতিকা রহমান।