বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ আছেন নতুন ‘দুশ্চিন্তায়’! দলের ভেতরে ও বাইরে- দুইদিক থেকেই চাপে পড়েছেন তাঁরা। চলমান কোনো মামলার রায়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা ‘অযোগ্য’ হয়ে পড়েন কী না- এ দুশ্চিন্তার পাশাপাশি আছে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে নতুন মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা।
‘আওয়ামী লীগের সমর্থক অনেক ব্যবসায়ী ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসছে ‘ বলে মোশাররফ ও হাফিজ যে বক্তব্য দিয়েছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সেগুলো গুজব হিসেবে গণ্য হচ্ছে। একটি বড় রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল পদে থেকে সাংবিধানিক সংস্থা ইসি ও দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তাঁদের দেওয়া বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই। ‘বিএনপি ও জামায়াত গুজব ছড়িয়ে আসছে’ বলে এতোদিন সরকার যে অভিযোগ করে আসছে, বিএনপির ওই দুইনেতার বক্তব্যে এর প্রমাণ মিলছে বলেও মনে করছে সরকার।
বিএনপির দলীয় সূত্র মত ও পথকে জানায়, দলের ‘নেতৃত্বে আসন্ন পরিবর্তনের’ সময় মোশাররফ ও হাফিজের অবস্থান কী হবে, তাঁদের বলয়ের নেতারা কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকতে পারছেন কী না- এ বিষয়ে ‘উদ্বেগ’ আছে। দুজনের দলে আলাদা প্রভাব বলয়ের নেতাকর্মীও আছেন। ‘সরকারবিরোধি আন্দোলন’ গড়ে তুলতে না পারার অভিযোগ আছে তাঁদের বিরুদ্ধে। আগামীতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে তাঁদেরকে রাখার বিষয়ে অন্য শীর্ষনেতাদের বিরোধিতাও আছে প্রকাশ্যে।
তথ্য বলছে, গত ২২ জানুয়ারি ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির শীর্ষনেতা খন্দকার মোশাররফ দাবি করেন- ‘আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছেন আওয়ামী লীগের বড় বড় ব্যবসায়ীরা।’ গত ৭ জানুয়ারি রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে লেবার পার্টির উদ্যোগে আয়োজিত এক সভায় হাফিজউদ্দিন দাবি করেন, ‘সর্বশেষ সিইসি কেএম নুরুল হুদার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাঁর মার্কিন ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এ রকম আরো অনেক আসবে।’ ড. মোশাররফের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ১৬টি আর হাফিজের নামে আছে ৭টি। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে নতুন করে মামলা দ্রুত এগিয়ে নিতে পারে বলেও তাঁদের ঘনিষ্ঠ নেতাকর্মীদের ধারণা।
যোগাযোগ করলে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ বিষয়ে মত ও পথকে সোমবার বিকেলে মুঠোফােনে বলেন, ‘সরকার বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য যা কিছু করা দরকার, তার সবকিছুই করছে। এসব নিয়ে আমরা মোটেও চিন্তিত নই। কারণ, জেল খাটার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে, আমাদের আর জেলের ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। এ সরকারের সময় ঘনিয়ে এসেছে।’
বিএনপির সূত্র বলছে, দলটির ‘গুরুত্বপূর্ণ ও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য’ নেতাদেরকে হঠাৎ করে দল ও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকে ‘আতঙ্কে’ আছেন। গত বছরের শেষ দিকে হঠাৎ করে দলের প্রভাবশালী দুইনেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কারণে জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে নতুন করে দুশ্চিন্তা ভর করে। গত ২৫ ডিসেম্বর ‘দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে’ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে খুলনার প্রভাবশালী নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি দেওয়া হয় দল থেকে।
গত বছরের অক্টোবরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গত ৩ নভেম্বর বরিশাল নগরীর নতুন কমিটি থেকে যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ারকে বাদ দেওয়া হয়। তাঁদেরকে দল থেকে বহিষ্কারের আগে বিষয়টি নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ‘একক সিদ্ধান্তে’ তাঁদেরকে অব্যাহতির খবরে দলে নানা ধরনের আলোচনা শুরু হয়। তবে এ প্রক্রিয়া ‘নতুন নেতৃত্বের পরিবর্তনের হাওয়া’ বলেও মনে করেন বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কয়েক নেতা।