এরই মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে, এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা দুই সপ্তাহ পিছিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আয়োজনের কথা ভাবছে বাংলা একাডেমি। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে; যদিও করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ আমাদের আশঙ্কিত করে তুলেছে। তবে রাস্তাঘাটে বা শপিং মলে কিংবা বাণিজ্য মেলায় সাধারণ মানুষের আচরণে মনে হয় না যে কভিড অতিমারি নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা আছে।
যেহেতু বইমেলাকে কেন্দ্র করেই আমাদের প্রকাশনাশিল্পের বিকাশ, সব সতর্কতা অবলম্বন করে বইমেলা হওয়া আমাদের কাম্য।
এবারের বইমেলা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কিছু প্রস্তাব নীতিনির্ধারকদের বিবেচনার জন্য পেশ করতে চাই:
১. বইমেলা এক মাসের বদলে ১৫ দিনের জন্য করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। তাতে ভিড় অনেকটা এড়ানো যাবে। মেলা আয়োজনের খরচ এবং প্রকাশকদের খরচ দুটিই কম হবে। তবে স্টলভাড়া যুক্তিসংগতভাবে কমাতে হবে।
২. বাংলা একাডেমিকে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় মেলা আয়োজন বাবদ কোনো অর্থ বরাদ্দ দেয় না। স্পনসরশিপ ও স্টলভাড়া থেকে মেলার খরচের বেশির ভাগ নির্বাহ করা হয়। তবে স্পনসরশিপের প্রক্রিয়াটি বিস্ময়কর। একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কম্পানি স্পনসরশিপ জোগাড় করে। কিন্তু টাকার অঙ্ক বাংলা একাডেমি জানে না। কম্পানিটি নির্ধারিত কিছু কাজের খরচ বহন করে—স্পনসরশিপ থেকে লাভ-লোকসানের দায়িত্ব তাদের।
অমর একুশে গ্রন্থমেলার মতো একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক আয়োজন স্পনসরশিপের মুখাপেক্ষী কেন হবে? আমাদের সুস্পষ্ট দাবি, সরকার বইমেলা আয়োজনের জন্য বাংলা একাডেমিকে চার কোটি টাকা বরাদ্দ করবে। তখন আর কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হতে হবে না। এতে স্টলভাড়া কমিয়ে প্রকাশনাশিল্পকে একটি প্রণোদনা দেওয়া হবে। সরকার (সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়) এর আগে তিন দিনের ঢাকা লিট ফেস্টকে দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল।
৩. জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের জন্য মেলায় ঢোকার জন্য ১০ বা ২০ টাকার টিকিটের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে বিনা মূল্যে মেলায় প্রবেশ করতে পারবে।
৪. মেলায় ঢোকার সময় এবং পরে মেলায় অবস্থানকালীন অবশ্যই সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। গেটে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে লেখক এবং বইমেলার ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত উৎসাহী। তাঁর কাছে যদি যথাযথভাবে বইমেলা আয়োজনের ব্যাপারটি উপস্থাপন করা যায়, তাহলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, চার কোটি টাকা অনুদান পাওয়াটা কোনো সমস্যা হবে না।
এই সংকটের সময়েও সবার দায়িত্বশীল ও সহযোগিতামূলক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে আমাদের প্রাণের বইমেলা অনুষ্ঠিত হোক—এটাই প্রত্যাশা।
লেখক : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব