আগামী জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপি’কে হারানোর কৌশল জানালেন ভারতের আলোচিত ‘রাজনৈতিক কৌশলবিদ’ প্রশান্ত কিশোর বা পিকে। তার মতে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন ফাইনাল হলে আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সেমিফাইনাল। তবে সেমিফাইনালের ফল পক্ষে না গেলেও ফাইনালে নরেন্দ্র মোদীকে হারানো সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন পিকে।
সোমবার (২৪ জানুয়ারি) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রশান্ত কিশোর জানান, তিনি এমন একটি বিরোধী দলীয় জোট গড়তে সাহায্য করছিলেন, যেটি বিজেপি’কে টেক্কা দিতে পারতো।
পিকে বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি’কে হারানো সম্ভব। কিন্তু এখনকার বিরোধীদের দিয়ে কি তা সম্ভব? সম্ভবত না… আমি এমন একটি বিরোধী জোট গড়তে সাহায্য করতে চাই যেটি ২০২৪ সালে আরও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারে।
তার মতে, হিন্দুত্ব, জাতীয়তাবাদ ও কল্যাণের সমন্বয়ে বিজেপি এক ‘দুর্দান্ত ধারা’ চালু করেছে। নির্বাচনে জিততে হলে এর মধ্যে অন্তত দুটিতে বিরোধীদের এগিয়ে যেতে হবে।
ভারতীয় লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে প্রায় ২০০ আসনে বিজেপি-কংগ্রেস দ্বিমুখী প্রতিযোগিতার কথাও উল্লেখ করেন বহু নির্বাচনে সফল এ কৌশলবিদ। তিনি জানান, গত দুই নির্বাচনে এ ২০০টির মধ্যে ৯৫ শতাংশ আসনেই বিজেপি জয় পেয়েছে। ফলে আগামী নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন দলটি প্রায় ১৯০ আসনে বাড়তি সুবিধা পাবে।
৪৫ বছর বয়সী পিকে বলেন, যে দল বা নেতা বিজেপি’কে হারাতে চান, তার অবশ্যই ৫-১০ বছরের লক্ষ্য থাকতে হবে। পাঁচ মাসে এটি সম্ভব নয়।
প্রশান্ত কিশোর জানান, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জীর কাছে বিজেপি ধরাশায়ী হওয়ার পরে ভারতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে প্রায় পাঁচ মাস ধরে তার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা ভেস্তে যায়।
তিনি বলেন, অন্যদের জন্য এটি ভাবা সহজ যে, প্রশান্ত কিশোর ও কংগ্রেসের একসঙ্গে কাজ করা উচিত। কিন্তু এর জন্য উভয় পক্ষেরই একে অপরের ওপর বিশ্বাস থাকা দরকার। কংগ্রেসের সঙ্গে সেটি হয়নি।
পিকে বলেন, আমি কংগ্রেসের প্রশংসা করি। তারা যে ধারণা ও স্থানের প্রতিনিধিত্ব করে, তা ছাড়া কার্যকর বিরোধিতা সম্ভব নয়। তবে তার মানে এই নয় যে, বর্তমান নেতৃত্বের অধীনে বর্তমান কংগ্রেসই থাকতে হবে। বিজেপিকে হারাতে হলে কংগ্রেসের পুনর্গঠন দরকার।
গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রশান্ত কিশোরের কৌশলেই মমতা ব্যানার্জীর দল তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপি’কে নাস্তানাবুদ করেছে। এবার কংগ্রেসকে পেছনে ফেলে তৃণমূলকে ভারতের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে গড়ে তুলতে চান পিকে- এমন বিশ্বাস অনেকের। ফলে কংগ্রেসের নেতৃত্বে পরিবর্তনের পরামর্শ তাদের ওপর ‘প্রতিশোধ’ কিনা এমন প্রশ্নও উঠছে।
এ বিষয়ে পিকের বক্তব্য, এত বড় দলের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমি খুবই ছোট। আমি মনে করি, দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল দরকার। কংগ্রেসকে দুর্বল হতে দেওয়া উচিত নয়। গণতন্ত্রের স্বার্থেই এটি দরকার।
তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনের পর তৃণমূল ও আই-পিএসি (প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা) এমন এক ব্যবস্থায় চলে গেছে, যেখানে দলটিকে জাতীয় পর্যায়ে পদচিহ্ন বাড়াতে সহায়তা করা লাগে। তাদের যেখানে যেখানে আমার সাহায্য দরকার, আমি রয়েছি।