বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)যে দুর্নীতি সূচক প্রকাশ করেছে সেটা নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই বলে জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। এটা দুদকের গ্রহণ বা বর্জনের বিষয় নয় জানিয়ে তিনি বলেছেন, রাতারাতি দেশ দুর্নীতিমুক্ত হয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। দুর্নীতি কমিয়ে আনতে দুদক অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
আজ বুধবার বিকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এক ধাপ এগিয়ে ১৩তম অবস্থানে। গত বছরে এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪তম। এছাড়া কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায়ও এক ধাপ অবনমন ঘটে ১৪৬ থেকে ১৪৭তম অবস্থানে এসেছে বাংলাদেশ।
টিআই রিপোর্ট প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই রিপোর্ট দুদকের গ্রহণ করারও বিষয় না, আবার বর্জন করারও বিষয় না। আমরা এটা যাচাই করে দেখব। এতে যদি আমাদের কাছে কোনো সুপারিশ থাকে, সেটা যদি বাস্তবসম্মত হয় আমরা সেটা অনুসরণের চেষ্টা করবো।’
দুর্নীতি সূচকে অবনমন ঘটেছে, তাহলে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক কী ধরনের কাজ করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা রিসার্চ উইং আছে, সেটা কাজ করছে। গত দুই বছর ধরে আমাদের কাজগুল একটু স্থিমিত হয়ে আছে। দুর্নীতি প্রতিরোধই আমাদের অন্যতম কাজ। কিন্তু করোনার কারণে সেটা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে হচ্ছে না।’
মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ২২টি মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি চিহ্নিত করে চিঠি দিয়ে সুপারিশ করেছি। তারা এগুলো বাস্তবায়ন করছে কি না সেই নির্বাহী ক্ষমতা কিন্তু আমাদের নেই। তবে আমরা এটা কন্টিনিউ করবো।’
টিআই এর ধারণা সূচকের বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুর্নীতি বাড়ল না কমল এটা আমি বলার কে? আমার কাজ হলো দুর্নীতির অভিযোগ আসবে, আমরা আইন অনুযায়ী তদন্ত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসবো। সেই সঙ্গে বিচার কাজে সহায়তা করা। দুর্নীতি বাড়ল না কমল সেটা আপনারা বলবেন।’
এসব বিষয়ে সরলীকরণ না করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘গত দুই বছরের সঙ্গে তুলনা করলে হবে না। কারণ গত দুই বছর আমাদের অভিযোগ কম এসেছে। সরলীকরণ করা যাবে না। এখন গত দুই বছর আমাদের অভিযোগ কম এসেছে বলে কি আমি বলে দিতে পারবো, দুর্নীতি কমেছে? এটা যারা গবেষণামূলক কাজ করে তারা বলবে।’
আপনাদের দুর্নীতি প্রতিরোধের কাজ কি যথার্থ হচ্ছে এমন প্রশ্নে মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরাতো মনে করছি- আমরা কাজ করছি। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এগুলো মোকাবেলা করে আমরা কাজ করছি। আমরা চাই দিন দিন যেন দুর্নীতি কমে যায়। জনগণের প্রত্যাশা কিন্তু অনেক বেশি। আমরা জনগণের প্রত্যাশার কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছি।’
বেগমপাড়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদেরকে কেউ বেগমপাড়ার লিস্ট দেয়নি। এই লিস্ট পাবার কোনো ম্যাকানিজমও আমাদের জানা নেই। বেগমপাড়ায় কার কার বাড়ি আছে ওইটা জানার ম্যাকানিজম আমাদের জানা নেই। বার বার চাওয়ার পরওতো আমরা সেই তালিকা পাচ্ছি না, আমরা কীভাবে আগাবো? যেগুলো পেয়েছি সেগুলো নিয়ে কাজ করছি।’
দুদক কি জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করে, এই বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুর্নীতির ব্যাপারে দুদক জিরো টলারেন্স বা দুর্নীতির ব্যাপারে নমনীয় দেখানোর দুদকের কোনো সুযোগ নেই। দুদক আইনের মাধ্যমে কমিশন তৈরির হয়েছে দুর্নীতি দমনের জন্য। দুদকের একমাত্র কাজই দুর্নীতি দমন করা।’
মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশ দুর্নীতিমুক্ত নয়, মাত্রা কম বেশি আছে। আমাদের যেমন অনেক প্রতিকূলতা আছে। এছাড়া সময় ও প্রযুক্তি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতির ধরন-ধারণ পাল্টে যাচ্ছে। আজ ঘুমাবেন কাল দেশ দুর্নীতিমুক্ত হবে এটা ভাবার সুযোগ নেই।’
বেগমপাড়ায় কারো সম্পদের তথ্য পেলে সেটা উদ্ধার করতে দুদকের সক্ষমতা আছে কি না এমন প্রশ্নে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘বেগমপাড়ার তালিকা আমরা পাইনি। আর দ্বিতীয় কথা হলো মানি লন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে যে দেশে টাকা যায়, যত উন্নত দেশই হোক তারা আমাদের তথ্য জানাতে চায় না। কারণ টাকাগুলো তার দেশ যাচ্ছে সে কারণেই তারা সঠিক তথ্য দেয় না।’
মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, ‘যেসব দেশে টাকা পাচার হয় যাচ্ছে তারা বলছে, মামলা করলে তথ্য দেবে। আমারতো মামলা করার জন্য তথ্য দরকার। কোনো দেশই সহজভাবে দিচ্ছে না। এই প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের কাজ করে যেতে হয়, হচ্ছে। অনেক সীমাবদ্ধতার জন্যই আপনাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছি না।’