আন্দোলনের দুই সপ্তাহ হয়ে গেলো। শিক্ষার্থীদের অনশনের সাতদিন কেটে যায়। এরপর দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল গিয়ে শিক্ষার্থীদের ‘আমরণ অনশন’ ভাঙান। আজ বুধবার সকালে। সরকারের প্রতিনিধি হয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) তিনি যান। আপাতত অনশন কর্মসূচি নেই। শাবিপ্রবির উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। জানালেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
‘সাধারণ বিষয়কে’ এতো জটিল করা হলো কেন? দুইপক্ষের সঙ্গে কার্যকর বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধানে উদ্যোগ নিতে এতো দেরি হলো কেন? প্রশাসনের অবিমৃশ্যকারিতার কারণে একটি ছোট সমস্যা যে কী গুরুতর রূপ নিতে পারে, শাবিপ্রবির এ ঘটনা তার প্রমাণ নয় কি?
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমানোর জন্য কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তগুলোর কঠোর সমালোচনা করেছেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বিষয়গুলোকে তিনি ‘অমানবিক, নিষ্ঠুর ও দানবীয়’ বলে অবহিত করেন। বলাবলি হচ্ছে- শাবিপ্রবির আন্দোলনের বিষয়ে শুরুতে কঠোর অবস্থান নেয় প্রশাসন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য ব্যবহূত কয়েকটি মুঠোফোন ব্যাংকিং ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আর্থিক সহায়তা করার অভিযোগে গত সোমবার রাতে ঢাকার উত্তরা থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কয়েক শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে পরে সিলেটে থানায় হস্তান্তর করা হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে আর্থিক সহায়তা করে সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীর গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘তাঁদের (আন্দোলনরত শিক্ষার্থী) যাঁরা টাকাপয়সা দিয়ে সাহায্য করেছেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর চেয়ে নিন্দনীয় ব্যাপার আর কিছু হতে পারে কী না, আমার জানা নেই।’
আন্দোলনে অর্থ জোগান দেওয়ার অভিযোগে সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাঁদের মুক্তি দাবি করেছে শাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে এ শিক্ষায়তনে অচলাবস্থা নিরসনে আশু ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আচার্যের কাছে আজ বুধবার খোলা চিঠি লিখেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। বিষয়টির আগেই সমাধান হয়ে গেলে এতো সমালোচনার জন্ম হতো না।
ভোর ৪টার দিকে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, স্ত্রী তাঁর ড. ইয়াসমিন হক শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে পৌঁছান। সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করেন। জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার জন্য অনুনয় করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের জানান, ‘তাদের সব দাবি পূরণ করা হবে। যে মামলা হয়েছে, তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাউকে হয়রানি করা হবে না।’ এসব উদ্যোগ আগেই নেওয়া যেতো।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বুধবার সংসদে বলেন, ‘দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলছেন। কিছু সমস্যা, যা কাঁটার মতো পায়ে বিঁধছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের মধ্যে কারো কারো কাণ্ডজ্ঞানহীন কথাবার্তা, আচার-আচরণ দুঃখজনক। ভাব দেখে মনে হচ্ছে, তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের খেপিয়ে তোলার মিশনে নেমেছেন। এ ব্যাপারে সরকারের নজর দেওয়া উচিত।’ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ১৪ দলের জোটের শরিক জাসদ। প্রশাসনকে ‘বেকায়দা ফেলতে’ তিনি বক্তব্য দেননি নিশ্চয়। তিনি যেসব দিক সামনে এনেছেন কয়েক উপাচার্য প্রসঙ্গে, প্রশাসন সেসব দিকে সতর্ক থাকলেই হয়।
শাবিপ্রবিতে এবারের আন্দোলনের শুরুটা ছিলো ছাত্রীদের। দাবি- প্রভোস্টের অপসারণ। উপাচার্যের ডাকে পুলিশি অ্যাকশন পরিস্থিতি করে তোলে জটিল। এরপর অনশন। ঘেরাও। বিক্ষোভ। অনড় দুইপক্ষই। উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আলোচনাও কোনো ফল দেয়নি। তবু অচলাবস্থা নিরসনে এতো বিলম্ব কেন হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন বাড়ছিল। উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ দৃশ্যত তাকিয়ে আছেন সরকারি সিদ্ধান্তের দিকে। তাঁর পদত্যাগ ছাড়া অন্য কোনো সমাধান মানতে রাজি নন শিক্ষার্থীরা।