শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) চলমান ইস্যু নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের অনেক আন্দোলনে আমরা সহিংসতা, নানা ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা দেখি। কিন্তু শাহজালালে যে আন্দোলন হয়েছে এটা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এজন্য তারা অবশ্যই সাধুবাদ পাবেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক। তাদের সব দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন করবো। তারা অনশন ভেঙেছেন, এজন্য তাদের সাধুবাদ জানাচ্ছি। তাদের অনেক সমস্যা রয়েছে। আমরা সবাই মিলে সমস্যাগুলোর সমাধান করবো। কারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তানতুল্য। সেখানে আমাদের সন্তানরা অনশন করবে এটা আমাদের কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাদের যত যৌক্তিক দাবি তার সঙ্গে আমরা আছি। থাকবো।’
বুধবার রাতে রাজধানীর হেয়ার রোডের সরকারি বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় শিক্ষার্থীদের সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে সব দাবি পূরণের বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার কথা বলেন মন্ত্রী। তিনি আন্দোলন প্রত্যাহার করতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বানও জানান। এর আগে সকালে অনশনরত শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল।
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এই যে আন্দোলনের সময় কিছু মামলা হয়েছে বা যা ঘটে গেছে সেগুলো পেছনের ঘটনা। পেছনে যা ঘটেছে সেগুলো থাকবে না। এর কোনো আইনি, পড়াশোনা বা শিক্ষা জীবনে এর কোনো প্রভাব থাকবে না। মামলা থাকবে না। এটা নিয়ে টেনশন করতে হবে না।
দীপু মনি বলেন, আমরা চাই সমস্যার সমাধান করে সামনে এগিয়ে যেতে। মামলার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো। শিক্ষার্থীদের যেন কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সেটা নিশ্চিত করবো।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে সিলেটের ক্যাম্পাসে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সরকার সবাই একপক্ষ। এখানে দুই পক্ষ বলে কিছু নেই। আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে কিছুটা ভেঙে পড়েছেন। তারা একটু গুছিয়ে উঠুক। কিছুদিন পর আমরা সেখানে যেতে পারি। শিক্ষার্থীরা চাইলে আমরা যেকোনো সময় তাদের সঙ্গে বসবো। আমি প্রস্তুত আছি। যেকোনো সময় যেতে পারি।
অনশন ভাঙাকে সমস্যা সমাধানের সুযোগ হিসেবে দেখার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা এখন সমস্যাগুলো সুষ্ঠুভাবে দেখার সুযোগ পেলাম। সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য চেষ্টা করবো। এই সমস্যা শুধু শাহজালাল নয়, অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। আমাদের জন্য এসব সমাধানের সুযোগ হবে। আর শাহজালালে যে পুলিশি হামলার ঘটনা ঘটেছে এটা দুঃখজনক। এরজন্য যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যে যেই হোক।
উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, উপাচার্যের বিষয় কথা হলো, তিনি থাকলেন কি না সেটা বড় বিষয় না। কারণ একজন না থাকলেও আরেকজন আসবে। তারপরও এটার তো অনেক পদ্ধতি আছে। রাষ্ট্রপতি চ্যান্সেলর। উপাচার্য থাকা না থাকা রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত।
গত ১৩ জানুয়ারি রাতে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। পরদিন রবিবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে। ১৫ জানুয়ারি বিকালে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েনের প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় শাবি কর্তৃপক্ষ।
তবে তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কিলোতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন শুরু করেন। প্রায় ২৮ জন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন। বুধবার সকালে তাদের অনশন ভাঙান অধ্যাপক জাফর ইকবাল।