শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ আগামী সপ্তাহ থেকে ‘দীর্ঘ ছুটিতে’ যেতে পারেন। ‘ছুটির কৌশলের’ মধ্য দিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ ছেড়ে দেবেন। ‘লম্বা ছুটি কৌশলের’ বদলে তিনি ‘স্বেচ্ছায় পদত্যাগও’ করতে পারেন। তাঁর পদত্যাগে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করতে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাঁকে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র মত ও পথকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব তথ্য জানায়।
সূত্র জানায়, সরকারের সিদ্ধান্তে নাটকীয় কোনো পরিবর্তন না হলে দু-চার দিনের মধ্যে শাবিপ্রবির উপাচার্যের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। উপাচার্যের নিয়োগ দেওয়া ও তাঁদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের। তবে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের পরামর্শও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্যের (রাষ্ট্রপতি) সাচিবিক কাজটি করে থাকে। ফলে রাষ্ট্রপতি ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়কে এসব বিষয় অবহিত করার মূল দায়িত্বও তাদের। সরকারের শীর্ষ পর্যায় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় শাবিপ্রবির উপাচার্যের পদত্যাগ ও নতুন কাউকে নিয়োগের বিষয়গুলো সমন্বিতভাবে দেখভাল করছে।
শাবিপ্রবির উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে সরকারের প্রতিনিধি হয়ে গতকাল বুধবার আশ্বাস দেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি মত ও পথকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি আশাবাদী।’ শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের ‘সব দাবি বাস্তবায়ন করা হবে’ বলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও জানান।
প্রশাসন সূত্র জানায়, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক আন্দোলনে ‘তৃতীয়পক্ষের কোনো ইন্ধন’ আছে কী না, সেসব খতিয়ে দেখে ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বা যারাই দায়ী, তাদের বিরুদ্ধেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনে অংশ নেওয়া কোনো শিক্ষার্থীকে কোনোভাবে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হয়রানি না করতে বলা হয়েছে। আন্দোলনে অর্থ যোগানদাতা হিসেবে গ্রেপ্তার শাবিপ্রবির সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীও জামিন পান গতকাল বুধবার। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বুধবার সন্ধ্যায় শাবিপ্রবির প্রসঙ্গে মত ও পথকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কয়েক দফা দাবি হঠাৎ একদফায় কীভাবে পরিণত হলো, সেটা বুঝতে পারলাম না। তাদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনা দু:খজনক। এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বা যারা দায়ী হোক, যাদেরই অবহেলা বা ত্রুটি-বিচ্যুতি পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি- অভিযান, গণমাধ্যম ও পরিকল্পনা) হায়দার আলী খান বলেন, ‘শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হয়রানি বা হামলার অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জানুয়ারি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু হয় বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ’ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিনদফা দাবিতে। শুরুতে কয়েকশত ছাত্রী ওই আন্দোলনে যোগ দেন। এরপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। পরে পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করেন। এ সময় শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়। এ প্রেক্ষাপটে ‘আন্দোলনের গতি’ বদলে যায়।
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের ‘একদফা দাবিতে’ রূপ নেয় আন্দোলন। এক সপ্তাহের মাথায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অনশন শুরু করে। অনশনের সাত দিনের মাথায়, বা ১৬৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট পর গতকাল বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদেরকে পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান। এরপরও মূল দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।
ক্যাম্পাস