সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ‘উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত করতে’ ভূমিকা রাখায় এখন আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে দৃশ্যপটে তিনি নিয়ে আসেন। কয়েক দফা আলোচনার পরও শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণায় ছিলেন অনড়। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের তরফে বা প্রতিনিধি হিসেবে ড. জাফর ইকবালকে সেখানে পাঠিয়ে ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক’ করার পরিকল্পনা নানকের। সরকার ও আওয়ামী লীগের সূত্র মত ও পথকে এসব তথ্য জানা
সূত্রমতে, ঢাকায় বসে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সার্বিক দিক শুরু থেকে পর্যবেক্ষণ করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। সিলেটেও তিনি খুব পরিচিত। শিক্ষার্থীদের দাবি একপর্যায়ে ‘একদফায়’ গড়ায়- উপাচার্যের পদত্যাগ। দাবিতে তাদের অবস্থান অনড়। পথ খুঁজলেন নানক। পরিকল্পনায় আসে জাফর ইকবালের নাম। সরকারপ্রধান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে জানান ওই পরিকল্পনার কথা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তনয়া শেখ হাসিনা এতে পূর্ণ সমর্থন দেন।
দলীয় সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার রাতে জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আসীম কুমার উকিল ও সুভাষ সিংহ রায় অধ্যাপক জাফর ইকবালের ঢাকার বাসায় গিয়ে দেখা করেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে পুরো পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা। তাঁকে সিলেট যেতে রাজি করাতে সক্ষম হন আওয়ামী লীগের নেতারা। ভোররাতেই সস্ত্রীক সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তিনি। বুধবার সকালে শাবিপ্রবির ক্যাম্পাসে অবস্থান কালে তিনি সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের কথা ইঙ্গিতও দেন।
শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল শাবিপ্রবিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ‘আমরণ অনশন’ ভাঙান, গতকাল বুধবার সকালে। আপাতত শিক্ষার্থীদের অনশন বা কোনো কর্মসূচি নেই। তবে শাবিপ্রবির উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানান তারা। উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে জানতে চাইলে জাফর ইকবাল মত ও পথকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি আশাবাদী।’ শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের ‘সব দাবি বাস্তবায়ন করা হবে’ বলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও জানান।
আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, শাবিপ্রবির পরিস্থিতির সমাধান করতে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল গত মঙ্গলবার রাতেও চেষ্টা করে। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল অবস্থান করে সিলেটে। দলের সদস্যরা করণীয় নির্ধারণ করতে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানসহ অন্যান্যদের নিয়ে বৈঠক করেন। তবে তাঁরা সফল হতে পারেননি।
শাবিপ্রবির উপাচার্যবিরোধি আন্দোলনে সিলেটের আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতির একটা ছায়া পড়ে। ফলে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় বিভিন্ন উদ্যোগ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের সঙ্গে বর্তমান উপাচার্যের সখ্য আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দরপত্রহ অন্যান্য কার্যক্রমে তাঁকে প্রাধান্য দেন উপাচার্য। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানের সঙ্গে উপাচার্যের দূরত্ব রয়েছে।
রাজনীতি