ইসি আইন নিয়ে ১৪ দলীয় জোট চুপ কেন?

হাসান শান্তনু

১৪ দলীয় জোট
ফাইল ছবি

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন কেন্দ্র করে ১৪ দলের জোটকে আবারো সক্রিয় করার চেষ্টা শুরু হয় গত বছরের শেষ দিকে। ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ শুরুর আগে জোটকে সক্রিয় করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয় জোটের নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগ। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দলগুলোর আলাদা সংলাপে ১৪ দলের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান প্রকাশ ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্যের বাস্তবায়নে ইসি আইন প্রণয়নে সরকারি উদ্যোগের পর থেকে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর কোনো ভূমিকা দেখতে পাচ্ছেন না জোটের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কয়েক নেতা।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের দাবি অনুযায়ী ইসি গঠনে সরকারের আইন প্রণয়নের উদ্যোগ ও সংসদে আইনটি পাস হলেও ১৪ দলীয় জোটের বেশিরভাগ দলের নেতার এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই। অনেক দল এখনো পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দেয়নি, জোটগতভাবেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি নেই তাদের। ইসি আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়ার দিন থেকেই খসড়া নিয়ে বিএনপি ও দলটির জোটমিত্রদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। তাদের দাবি, ‘যেই লাউ সেই কদু হওয়ায় তারা ইসি আইন মানেন না।’ রাজনীতির মাঠে প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির আইনটির বিরোধিতার জবাবে ১৪ দলের নেতারা চুপ।

universel cardiac hospital

প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক বক্তব্যের জবাব দেওয়া ও নিজ দলের সরকারের কার্যক্রম ইতিবাচকভাবে জনগণের কাছে তুলে ধরা রাজনীতিতে স্বাভাবিক বিষয়। সবদেশের রাজনীতিবিদরাই এর চর্চা করেন। ইসি গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি আইনের বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আদর্শিক মিত্রদের নিরব থাকার বিষয়টি প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। ১৪ দলীয় জোটের সূত্র মত ও পথকে এসব তথ্য জানায়।

মত ও পথের পর্যালোচনা বলছে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে সমঝোতার ভিত্তিতে জোটের শরিক দলগুলো থেকে ইসি গঠনের দাবি জানানোর যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সংলাপে এর প্রতিফলন দেখা যায়। ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ছাড়া আরো সাতটি দল সংলাপে অংশ নেয়। সব দলই নতুন ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের পক্ষে মত দেয়। দলগুলো হচ্ছে- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), সাম্যবাদী দল, তরীকত ফেডারেশন, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি ও জাতীয় পার্টি (জেপি)।

সংলাপে দলগুলো অভিন্ন সুরে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ইসি গঠনে স্থায়ী আইন প্রণয়নের ওপর জোর দেয়। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‌’ইসি গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তা চাইলে আওয়ামী লীগ ১৪ দলকে নিয়ে একসঙ্গেই সাড়া দেয়।’

জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে ১৪ দলের অন্যতম শরিক, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ইসি গঠনের আইনের খসড়া প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি কিছুটা নেতিবাচক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘সরকার দেরিতে হলেও নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আইন এনেছে, এ জন্য অভিনন্দন। তবে আইনটি অসম্পূর্ণ। এ কারণে বিতর্ক অব্যাহত থাকবে।’

প্রসঙ্গত, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পাস হয় বহুল আলোচিত ইসি গঠনের বিল- ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’। সংসদে বিলের ওপর আনা বিরোধীদলীয় সদস্যদের কিছু সংশোধনী গ্রহণ করা হলেও খসডায় মৌলিক কোনো পরিবর্তন আসেনি। বিলের ওপর সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন জাতীয় পার্টি, বিএনপি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্যরা। যার মধ্য থেকে ২২টি প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ আইন পাসের ফলে দীর্ঘদিন পরে ইসি গঠনের পদ্ধতি সাংবিধানিক পূর্ণতা পেল।

শেয়ার করুন