প্রতিবছরের ন্যায় এবারও দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ করেছে জার্মানির বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)। এতে সংস্থাটি ২০২১ সালের যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলাদেশের স্কোর বা নম্বর ২৬, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। বাংলাদেশের নিচে একমাত্র আফগানিস্তান। বৈশ্বিক বিচারে বাংলাদেশ ওপরের দিক থেকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪৭তম অবস্থানে আছে। আর নিচের দিক থেকে ১৩তম, যা আগের বছর ছিল ১২তম। অন্য কোনো দেশে দুর্নীতি কম বা বেশি হলে বাংলাদেশের অবস্থাও পাল্টে যায়। কিন্তু ২০১৮ থেকে টানা চার বছর দেশটির স্কোর ২৬ অপরিবর্তিত আছে। এর মানে দুর্নীতি কমছে, একই জায়গায় আটকে আছে। এটি আমাদের জন্য খুবই হতাশাজনক।
টিআই’র প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, দেশে সরকারি সেবা পেতে ৮৯ শতাংশ মানুষ ঘুস দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিচারহীনতা নিয়মে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্ক দেখাতে পারলেই অপরাধ করে পার পাওয়া যাচ্ছে। দুর্নীতির কারণে প্রতিবছর দেশের জাতীয় আয়ের কমপক্ষে ৩ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে আর বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিবছর ১২ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে যাচ্ছে।
এমতাবস্থায় আমরা মনে করি, দুর্নীতি নির্মূল কিংবা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে প্রথম দায়িত্বটা দুর্নীতি দমন কমিশনকে—ই (দুদক) নিতে হবে। আমরা লক্ষ করছি, দুদক দুর্নীতি দমনে তৎপর থাকলেও আশানুরূপ সাফল্য দেখাতে পারছে না। এক্ষেত্রে দুদক সম্পূর্ণরূপে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে কিনা, তা এক প্রশ্ন। কেননা দুদকের বর্তমান যে ক্ষমতা, তা যথেষ্ট নয়। কাজেই আমরা বলব, সম্প্রতি দুদকের পক্ষ থেকে এ সংস্থার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যে প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটি আমলে নেওয়া জরুরি।
দুর্নীতির করাল গ্রাস থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত করতে হলে—এর বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। তবে একথা সত্য যে, দুর্নীতি দমনে সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হলো সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা। সরকার যদি দুর্নীতিবাজদের প্রতি হার্ডলাইন নীতি গ্রহণ করে এবং সরকারদলীয় দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় না দেয়, তাহলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসবে, সন্দেহ নেই। সুতরাং টিআই’র দুর্নীতিসংক্রান্ত ধারণা সূচক আমলে নিয়ে সরকার দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে—এটিই আমাদের প্রত্যাশা।