বোরো ও আমন দুই মৌসুমেই ধানের ভালো ফলন হয়েছে। আমদানিও করা হচ্ছে চাল। গত অর্থবছরে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছিল। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রায় ৯ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। বর্তমানে সরকারি কোষাগারে ১৭ লাখ টনের বেশি চাল মজুত রয়েছে। তারপরও চালের বাজার চড়া। ধাপে ধাপে বাড়ছে দাম। সবমিলিয়ে চালের কেজিতেও দাম বেড়েছে চার থেকে আট টাকা পর্যন্ত।
১৫ থেকে ২০ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম সাত থেকে আট টাকা বেড়েছে। বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীরা এই ধরনের চাল বিক্রি করছেন ৬২ থেকে ৬৮ টাকায়। এ ছাড়া বিআর-২৮ জাতীয় (মোটা চাল) চালের কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। তবে আগের মতোই প্রতি কেজি নাজিরশাইল চাল রাখা হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭৫ টাকা।
কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ মত ও পথকে জানান, বৈশাখ মাসে যখন ইরি ধান উঠেছিল তখন চালের দাম কমেনি। এখনও কমার লক্ষণ নেই। বরং দিন দিন দাম বাড়ছে।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মানেনি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা। নিজেদের খুশিমতো তারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। বোতলজাত এক লিটারের বোতলে পাঁচ টাকা বাড়ানো হলেও পাঁচ লিটারের বোতলে বাড়ানো হয়েছে ৪০ টাকা। খোলা সয়াবিন তেলে বাড়তি নেওয়া হচ্ছে ৯ থেকে ১৪ টাকা। আর পাম তেলে বেশি রাখা হচ্ছে ১৮ থেকে ২২ টাকা পর্যন্ত। কারওয়ান বাজার, মগবাজার, নাখালপাড়াসহ কয়েকটি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন মত ও পথকে বলেন, গত কয়েক দিন ধরে যেসব বোতলজাত তেল দিচ্ছে কোম্পানিগুলো সেগুলোর গায়ে নতুন দর লেখা রয়েছে। পাঁচ লিটার ৮০০ আর এক লিটারের বোতল ১৬৫ টাকা। পাইকাররা দাম বাড়ালে খুচরা ব্যবসায়ীদের কিছু করার থাকে না।
রমজান মাস সামনে রেখে বাড়তে শুরু করেছে ছোলার দাম। গত এক মাসের ব্যবধানে খাদ্যশস্যটির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা। এক কেজি ছোলা এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। যা মাসখানেক আগেও ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, এক বছরের ব্যবধানে সর্বোচ্চ ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে মসুর ডালের দর। আমদানি করা মসুর ডালের কেজি ৯৫ থেকে ১০০ আর দেশি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা।
আটা-ময়দার দামও বেড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়ে দুই কেজির প্যাকেট আটার দাম হয়েছে ৯০ টাকা। আর দুই কেজি ময়দার এক প্যাকেট কিনতে খরচ হবে ১০০ থেকে ১০৪ টাকা।
রাজধানীর মগবাজারে ক্রেতা আরিফ মোল্লা মত ও পথকে বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো করে জিনিসপত্রের দাম নির্ধারণ করেন। এতে সবচেয়ে বড় সংকটের মুখে পড়তে হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষের।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান মত ও পথকে বলেন, যেভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে তাতে রমজানে আকাশচুম্বী হবে। এখনই বাজারে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও তদারকি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি হতদরিদ্ররা যাতে কম দামে পণ্য পান, তা নিশ্চিত করতে হবে।