ভারতের কলকাতার বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনের কূটনীতিক মুহাম্মদ সানিউল কাদেরকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত চলছে। বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমের কাছে ‘লুকোছাপার কৌশল’ অবলম্বন করছেন। কেউ মুখ খুলছেন না। অভিযুক্ত সানিউলও প্রচারমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন।
ভারতীয় প্রচারমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির এক নারীর সঙ্গে বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের রাজনৈতিক সচিব সানিউল কাদেরের বেশ কিছু ‘অশ্লীল চ্যাট ও ভিডিও’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে ‘আপত্তিকর, অশালীন’ অবস্থায় তাঁকে ওই নারীর সঙ্গে নাচতে দেখা যায়। এ ঘটনা ঘিরে দেশটির নেটিজেনদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সানিউলের সঙ্গে ওই নারী হোয়াটসঅ্যাপে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন। তাঁর সঙ্গে তিনি ‘নগ্ন ভিডিও চ্যাট’ করতেন। সম্প্রতি ওই নারী কলকাতার উপ-হাইকমিশনে ‘প্রমাণসহ’ অভিযোগ করেন। তাতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও হাইকমিশনের কর্মকর্তারা যথেষ্ট ‘বিব্রত’ হন।
ভারতের আজতাক এক প্রতিবেদনে জানায়, গত মঙ্গলবার রাতে সানিউল কাদেরকে দেশে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশের সরকার। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কলকাতা ত্যাগ করে ঢাকায় ফিরে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁকে। পাশাপাশি ভারতীয় নারীর অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত বুধবার দুপুর ১২টা ১০মিনিটে ভারত থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে ফিরে যান সানিউল। বেনাপোল প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল এলাকায় স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকর্মীরা তাঁর ‘আকস্মিক ভারত ত্যাগের’ বিষয়ে জানতে চাইলে মুখ খোলেননি তিনি। একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে উঠে দ্রুত ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র মত ও পথকে জানায়, অভিযোগ ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পরই সানিউলকে ঢাকায় ডেকে পাঠানো হয়। বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসানও ঢাকায় এসেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সানিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে। ভারতীয় ওই তরুণীর সঙ্গে সানিউলের সম্পর্ক ‘হানি ট্র্যাপ’ কী না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একইসঙ্গে তিনি ‘অফিস রাজনীতির শিকার’ কী না, সেটারও তদন্ত চলছে।
জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে কলকাতার বাংলাদেশ মিশনে প্রথম রাজনৈতিক সচিব হিসেবে যোগ দেন সানিউল কাদের। তিনি বিসিএস প্রশাসন (সাবেক ইকোনমিক) ক্যাডারের কর্মকর্তা। বিদেশে অবস্থিত দেশের দূতাবাসে কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে যৌন কেলেংকারির অভিযোগ আগেও বিভিন্ন সময় উঠেছে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে ব্যবস্থাও নেয় মন্ত্রণালয়। জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ কে এম মুজিবুর রহমান ভূঁইয়াকে ২০১১ সালে প্রত্যাহার করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। জাপানের টোকিওতে দূতাবাসে চাকরি করা একজন স্থানীয় নারীকে যৌন হয়রানির দায়ে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া বা অন্য কোথাও বদলির তখন সুপারিশ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি।
গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদকে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকায় ফিরে আসার নির্দেশ দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নিজ বাসায় নিমন্ত্রণ করে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক নারীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত আনা হয়। ২০১৪ সালে প্রায় একই অভিযোগে লেবাননে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসুল আযম সরকারকে দেশে ফিরিয়ে আনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ