কুমিল্লার দেবীদ্বারে ইউপি নির্বাচনে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (বর্তমান চেয়ারম্যান) মোঃ মহিউদ্দিন মিঠুর নেতৃত্বে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোঃ জসীম উদ্দিনের নির্বাচনী অফিসে ঢুকে নেতা-কর্মীদের উপর হামলা ও অফিস ভাংচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হামলায় অন্ত:ত ১৫/১৬ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে নৌকা প্রতীকের ৬ সমর্থক গুরুতর আহত ধামতী গ্রামের মোঃ তাজুল ইসলামের পুত্র ইব্রাহীম (২৭), শাহ আলম ভূঁইয়ার পুত্র মনির হোসেন(৩৩) ও ধামতী আন্দিরপাড় এলাকার মোঃ শাহ আলমের পুত্র ইমরান হোসেন(২৮) মোঃ তাজুল ইসলাম’র মেয়ে মোসাঃ শিল্পী আক্তার (২৪), মোঃ আবুল কাসেমের পুত্র মোঃ মোঃ রাজীব (২৫), মোঃ আব্দুল গফুরের পুত্র নুরুজ্জামান (৩৫)কে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার দিবাগত রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উপজেলার ১৩নং ধামতী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ধামতী গ্রামের রহমান ফকিরের মাজার সংলগ্ন নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ জসীম উদ্দিনের নির্বাচনী কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
হামলার ঘটনায় নৌকা প্রতীকের সমন্বয়ক মোঃ ওমর ফারুক বাদী হয়ে ধামতী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ সাদেকুর রহমান সরকারসহ ১২জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৩০/৩৫জনকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।
এদিকে হামলাকালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রাতেই নৌকা প্রতীকের সমর্থক দুলাল ও আনারস প্রতীকের সমর্থক রুবেল আহমেদকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে তাদের ভ্রাম্যমান আদালতে হাজির করলে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আশিক-উন-নবী তালুকদার রাত ৮টার পর নির্বাচনী কার্যালয় খোলা রাখায় নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গের দায়ে ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা ২০১৬ ও সংক্রমক রোগ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন ২০১৮ এর ২৫ (২)’ ধারায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোঃ জসিম উদ্দিনকে ৫০ হাজার ও রাতে সংঘবদ্ধ হয়ে নির্বাচনী প্রচারনাকালে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির জন্য আনারস প্রতীকের মোঃ মহিউদ্দিন মিঠুকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেন।
রাতের ওই ঘটনায় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোঃ জসীম উদ্দিন জানান, শনিবার রাত ১১টায় আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী (বর্তমান চেয়ারম্যান) মহিউদ্দিন মিঠু এবং সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাদেকুর রহমান সরকারের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী নৌকা প্রতীক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতে করতে রাম দা, রড, লাঠিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নৌকা প্রতীকের কার্যলয়ে হামলা, ভাংচুর চালায়। এসময় আমার কমপক্ষে ১৫/১৬ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। পরবর্তীতে রাত সাড়ে ১১টায় মিঠু ও তার ক্যাডার বাহিনীসহ দেবীদ্বার থানার সহকারী উপ- পরিদর্শক (এ,এস,আই) মোঃ আনোয়ারের নেতৃত্বে পুনরায় আমার নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা চালায়।
তিনি বলেন, এসময় এ,এস,আই আনোয়ার ‘রাম দা’ হাতে অফিস ভাংচুর ও আমাকে লাঞ্ছিত করাসহ আমার সমর্থকদের বেধরক পিটিয়ে বেশ ক’জনকে আহত এবং একজন সর্মককে ধরে নিয়ে যায়। এ,এস,আই আনোয়ার জননেত্রী শেখ হাসিনা ছবি সম্বলিত আমার পোষ্টারে লাথিমারে এবং আমাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে মারতে উদ্যত হয়, আমি সম্মান ও প্রাণ ভয়ে দৌড়ে আত্মরক্ষা করি।
তিনি আরও বলেন, দেবীদ্বার সার্কেল এএসপি আমিররুল্লাহ একজন বিশেষ প্রার্থীর সমর্থনে কাজ করে যাচ্ছেন এবং ওই ঘটনায় গত ২৭ জানুয়ারী নির্বাচন কমিশনের বরাবরে আমি একটি অভিযোগ পত্র দাখিল করেছি, শুধু আমার ইউপিতেই পুলিশের পক্ষপাতিত্বই নয়, ১৫ টি ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও ওই সার্কেল এএসপির বিরুদ্ধে স্বজনপ্রিতীর অভিযোগ উঠেছে। মারাত্মক আহত আমার ৬ জন সমর্থককে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান (আনারস) প্রার্থী (বর্তমান চেয়ারম্যান) মোঃ মহিউ্িদন মিঠু জানান, আমি ও সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ সদেকুর রহমান সরকারসহ ৩ জন শনিবার রাত ৯টায় দেবীদ্বার সদর থেকে আসার পথে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বাড়ি সংলগ্নে আমার সমর্থকদের প্রতিষ্ঠিত আনারস প্রতীকের অফিস কার্যালয়ে চা’ খাওয়ার জন্য ডেকে বসায়, এসময় নৌকা সমর্থকরা টের পেয়ে আমার উপর হামলা করতে চড়াও হয়, নিরাপত্তার স্বার্থে এ ইউনিয়নের বিট পুলিশ কর্মকর্তা এএসআই আনোয়ার হোসেনকে আমাকে উদ্ধারে আহ্বান জানাই। এসময় এএসআই আনোয়ার হোসেন একদল পুলিশ নিয়ে আমাদের উদ্ধার করেন।
এ ব্যাপারে দেবীদ্বার- ব্রাক্ষণপাড়া সার্কেল এএসপি মোঃ আমিরুল্লা, দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ আরিফুর রহমান ও এ,এস,আই মোঃ আনোয়ার হোসেন’র সেল ফোনে শনিবার রাত থেকে রোববার বিকেল পর্যন্ত একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও ওনারা কেউই ফোন রিসিভ করেননি।
দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মোঃ মারুফুর রহমান’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ধামতী ইউনিয়নের দুই প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষের খবর পেয়ে ওসি মহোদয়সহ আমরা ঘটনাস্থলে যাই এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। এসময় একজন সমর্থকের হাত থেকে একটি বড় ছোড়া উদ্ধার করার সময় যার হাতে ছোরা ছিল সে পালিয়ে যায়। পরে ওই ছোরা হাতে এএসআই আনোয়ার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের সময় ছোরাটি ঘুরা-ঘুরি করার দৃশ্যটি স্থানীয় সিসি ক্যামেরাসহ মোবাইল ফোনে অনেকেই আপলোড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়। ওই দৃশ্যটি দেখলে মনে হয় এএসআই নিজেই ছোরা হাতে হামলা করছে।