করোনাভাইরাস কি শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বন্দি?

নুসরাত জাহান শুচি

বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
ফাইল ছবি

‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’-বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কথাটি কেবল প্রবাদে আটকে আছে। একটি জাতিকে শতবছর পিছিয়ে দেওয়ার জন্য এক বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাই যথেষ্ট হলেও করোনাকালীন বিধিনিষেধে বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল দেড় বছর।

ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বছরের বেশি সময় স্কুল বন্ধ রাখে ১৪টি দেশ, যার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এর প্রভাব যে কতটা ভয়াবহ, তা বলার প্রয়োজন বোধহয় নেই। এর ভবিষ্যৎ ভয়াবহতা টের পেতে বছরখানেক দেরি হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সঙ্গে সঙ্গেই এর তাৎক্ষণিক প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। দীর্ঘ দেড় বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও অনেক শিক্ষার্থীই ফেরেনি শ্রেণিকক্ষে। দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। বেড়েছে শিশুশ্রম। শুধু তাই নয়, করোনা মহামারির কেবল ১৫ মাসে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫১।। পড়াশোনা নিয়ে হতাশা, আর্থিক সংকট, পারিবারিক জটিলতা, চাকরির অভাব, সম্পর্কের অবনতি-এসবই আত্মহত্যার মূল কারণ।

universel cardiac hospital

মূলত করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের জীবন ঝুঁকিহীন রাখতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময় বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে শিক্ষার্থীদের ভাবনা সম্পূর্ণ ভিন্ন। অনেক শিক্ষার্থীর মতে, আত্মহত্যা অপেক্ষা মহামারিতে মৃত্যু শ্রেয়। দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর এই অসহায় অবস্থা অনেকটাই কাটিয়ে প্রাণোচ্ছল জীবনে ফিরতে শুরু করেছিল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চার মাসের মাথায়ই করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ বাড়লে ২২ জানুয়ারি থেকে ২ সপ্তাহের জন্য আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে একইরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই অনলাইন ক্লাস ও অফলাইন পরীক্ষা বা অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতি বা অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা কতটা উন্নত করা সম্ভব? ল্যাব বা প্র্যাক্টিকালের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কি অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব?

চোখ বন্ধ করে বলা যায়, করোনা মহামারি পেরিয়ে বিশ্ব যখন নতুন সূর্য দেখবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার জন্য বাংলাদেশ তখন অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজার খোলা থাকতে পারে, বাণিজ্য মেলা চলতে পারে, সেই স্বাস্থ্যবিধির আওতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন খোলা রাখা যায় না? বর্তমানে করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেলেও দেখা গেছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ও মারা যাওয়া রোগীর ৮৫ শতাংশই করোনার টিকা নেয়নি। অর্থাৎ কেবল সচেতনতা ও টিকা গ্রহণের মাধ্যমে করোনা মোকাবিলা সম্ভব। যেখানে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ভ্যাকসিনের আওতাভুক্ত, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আজন্ম অন্ধকারে না রেখে সচেতনতার সঙ্গে বিকল্প চিন্তা করার জোর দাবি জানাই।

লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

শেয়ার করুন