বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ‘মুক্তি ও তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার দাবি’ জানিয়েছেন ইউরোপে প্রবাসী বিএনপির নেতাকর্মী ও পাকিস্তানের নাগরিকরা। বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁরা ওই দাবি জানান। দাবি জানানোর সঙ্গে পাকিস্তানিরা অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশের প্রচলিত আইন’ বিকৃত করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত এ দেশের নাগরিকরা বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। সরকারের শীর্ষ পর্যায়েও বিষয়টির সমালোচনা চলছে। ব্রাসেলসে অবস্থিত ঢাকার দূতাবাসের পক্ষে বিএনপির বেলজিয়াম শাখার নেতাকর্মী ও পাকিস্তানি নাগরিকদের ‘আইন বিকৃতির’ প্রতিবাদ ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। এরপরও বিতর্ক থামছে না।
বেলজিয়াম দূতাবাসের এক কর্মকর্তা রোববার রাত ১২টার দিকে মত ও পথকে মুঠোফোনে জানান, গত ২৬ জানুয়ারি বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ‘ফ্রি খালেদা জিয়া’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বেলজিয়াম শাখা বিএনপি। এতে দলটির প্রবাসী নেতাকর্মীদের সঙ্গে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ইউরোপ প্রবাসী কয়েক রাজনীতিবিদ উপস্থিত ছিলেন। ‘ব্রাসেলস প্রেসক্লাবে’ অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলন সফল করতে বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন প্রভাবশালী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত প্রবাসী রাজনীতিবিদরা।
সংবাদ সম্মেলনে দেশের সাবেক সরকারপ্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যাপারে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের হস্তক্ষেপ কামনা করে বক্তব্য দেন বেলজিয়াম, সুইডেন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বিএনপির প্রতিনিধিরা। এতে পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লর্ড ওয়াজিদ খান ও ইইউ পার্লামেন্টের সংসদ সদস্য ফুল ভিও মারতুসেল্লা ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। এতে ইউরোপিয় পার্লামেন্টের সদস্যদের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও কোনো সদস্য সশরিরে উপস্থিত ছিলেন না।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, ‘বাংলাদেশে কেউ ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করার আইনি ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির নেই।’ এতে ব্রাসেলসের পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সিটি কাউন্সিলার আমির নাঈম দাবি করেন, ‘খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অনুমতি না দেওয়ার পেছনে ভারতের ইন্ধন রয়েছে। ‘আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত কেউ বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি পেতে পারেন কী না’- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে এমন ঘটনা নতুন নয়। এর আগে আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা মোহাম্মদ নাসিম ও আ স ম আব্দুর রব দণ্ডিত হয়েও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেছেন।’
ব্রাসেলস প্রেসক্লাবে আয়োজিত বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত ‘তথ্য-উপাত্তকে বিভ্রান্তিকর ও বিকৃত’ বলে উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ দূতাবাস। প্রতিবাদপত্রটি ২৮ জানুয়ারি ওই প্রেসক্লাবের ওয়েবসাইটেও প্রচারিত হয়, যা এখনো আছে।
প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, ‘প্রেসক্লাব বাসেলস ইউরোপে গত বুধবার বেলজিয়াম বিএনপির তথাকথিত সংবাদ সম্মেলন দূতাবাসের নজরে এসেছে। সেখানে কয়েকজন বক্তার বক্তব্য ছিল বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর।’
ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাস বলেছে, সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে কেউ ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির নেই। এটি মিথ্যা। কাউকে ক্ষমা করার সব সাংবিধানিক এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির আছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাস বলেছে, তিনি আইনি প্রক্রিয়া মেনে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন কী না, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়।
সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা দেশে চিকিৎসা নেওয়া ও বিদেশে না যাওয়ার শর্তে খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের মেয়াদ তিন দফায় স্থগিত করেছেন। আদালতের রায়ে দ্রুত খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়কে ‘বিএনপি রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করে দেশে ও বিদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছে’ বলে দূতাবাস উল্লেখ করে।