বেঁচে থেকেও ‘মৃত’ রওশন, দল দখলের নতুন ‘খেলায়’ কাদের

হাসান শান্তনু

রওশন এরশাদ
ফাইল ছবি
চিকিৎসার নিয়মিত খোঁজ রাখেন প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদের বিরোধিদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বেঁচে থেকেও যেন দলে আজ ‘মৃত’! অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি গত বেশ কয়েক মাস ধরে রাজনীতির দৃশ্যপট থেকে দূরে থাকলেও তাঁকে নিয়ে নিজ দলের ভেতর নির্মম রাজনীতি চলছে। জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত এইচ এম এরশাদের স্ত্রী রওশনের বেলায় দলের শীর্ষনেতাদের মানবিক দিকটিও উপেক্ষিত। প্রায় তিন মাস ধরে থাইল্যান্ডের ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন। তাঁর খবর নেন না দলের কোনো নেতা।

রওশন অসুস্থ হওয়ার পর থেকে জাপায় তাঁর অনুসারী নেতা হিসেবে পরিচিতরাও ধীরে ধীরে দলের অন্যনেতাদের উপদলে মিশে যাচ্ছেন। তাঁরাও রওশনের চিকিৎসার খোঁজখবর রাখছেন না। তাঁর অনুপস্থিতিতে জাপার পুরো কর্তৃত্ব ও দখল নিজের কব্জায় নেওয়ার নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে দলটির চেয়ারম্যান ও বিরোধিদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের বিরুদ্ধে। এরশাদের মৃত্যুর পরই দলের কর্তৃত্ব নিজের দখলে নেওয়ার নানা পরিকল্পনা করেন কাদের। দলটি বিভক্ত হওয়ার কিনারায় নেমে পড়ার কথা সংবাদমাধ্যমেরও আলোচনায় আসে বারবার।

universel cardiac hospital

রওশন এরশাদ দলে যে গুরুত্বহীন, তা বোঝাতে এখনো পর্যন্ত তাঁর সুস্থতায় কোনো মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন দলের পক্ষ থেকে করা হয়নি। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত দলের সভাপতিমণ্ডলির বৈঠকেও তাঁর অসুস্থতা ও বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বৈঠকে দলের কয়েক নেতা চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে এ ব্যাপারে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। তাঁরা সরাসরি বৈঠকে বলেন, রওশন এরশাদের মতো এ অবস্থা ও পরিস্থিতি অন্যদেরও হতে পারে। মানবিক বিবেচনায় হলেও তাঁর খবর রাখা দরকার।

রওশন বেঁচে থাকতেই থাকে দলে প্রায় ‘মৃত’ করে রাখার পেছনে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের ছোট ভাই কাদেরের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি অসুস্থ হওয়ায় চেয়ারম্যান কাদের ও দলের আরও কয়েক নেতার রোগমুক্তি কামনায় একাধিক দোয়া-মাহফিলের আয়োজন দলীয় উদ্যোগে। শুধু রওশনের জন্য দলের কর্মসূচি আয়োজনের সময় নেই! অথচ প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই জাপায় তাঁর বিভিন্ন অবদান রয়েছে। জাপায় জি এম কাদের ও রওশন এরশাদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব দেখা দিলে রওশনও বিভিন্ন সময় নিজের ক্ষমতা দেখান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাপার শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক নেতা মত ও পথকে সোমবার দুপুরে দলের ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বলেন, ব্যাংককে নেওয়ার আগে প্রায় আড়াই মাস ধরে রওশন এরশাদ চিকিৎসা নেন ঢাকার একটা হাসপাতালে। বেশ সংকটাপন্ন অবস্থায় তাঁকে শেষ অবধি ব্যাংককে নিয়ে যাওয়া হয়।

অথচ এত দীর্ঘ সময় অসুস্থ থাকার পরও দলের পক্ষ থেকে তাঁর চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থার কোনো খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে না। রওশনবিরোধি দলের নেতাদের রোষানলের ভয়ে কেউ তাঁর খোঁজ নিচ্ছেন না। নিশ্চুপ আছেন রওশন এরশাদপন্থি নেতারা। অভিযোগের বিষয়ে জি এম কাদেরের বক্তব্য জানতে সোমবার কয়েকবার তাঁর মুঠোফোন নম্বরে ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।

জাপার নেতাকর্মীদের অভিযোগ করেন, জাপা এখন জাতীয় সংসদের বিরোধী দল। মন্ত্রিসভার কোনো সদস্য এখনো পর্যন্ত সংসদের বিরোধিদলের শীর্ষনেতা রওশনের চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজ নেননি। তবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এতো ব্যস্ততার মধ্যেও রওশনের চিকিৎসার বিষয়ে নিয়মিত খবর রাখছেন। জাতির জনকের তনয়া শেখ হাসিনা সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর গুণে গুণান্বিতা।

জানা গেছে, ব্যাংককে রওশন এরশাদের সঙ্গে থাকা তাঁর ছেলে ও রংপুর-৩ আসনের জাপার দলীয় সংসদ সদস্য রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ ফোন দিলে জাপার নেতারা রওশনের বিষয়ে তথ্য জানতে পারেন। এছাড়া দলের পক্ষ থেকে খোঁজ নেওয়ার আর কোনো ব্যবস্থা নেই। যোগাযোগ করলে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু মত ও পথকে বলেন, ‘রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থার সরাসরি কোনো খবর আমি জানি না। কারণ, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের কোনো সুযোগ নেই। সাদ এরশাদ ফোন করলে জানা হয়।’

শেয়ার করুন