ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজ বাসায় ফিরছেন। তাঁর দলের নেতারা বলছেন, তিনি এখনো পুরোপুরি সুস্থ নন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে যেতে সরকারি অনুমতি দরকার। সরকারের অনুমতির প্রশ্নে দলটি গত কয়েকমাস ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। ঢাকায় চিকিৎসায় এক ধরনের সুস্থতার পর বিদেশে নেওয়ার দাবি বিএনপি এখন কতোটা যৌক্তিক করে তুলতে পারবে? এ ইস্যুতে রাজপথে দলের নতুন করে কর্মসূচি থাকবে? দলের আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত সরকারের ওপর কতোটা চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে, সেই প্রশ্নে দলটির ভেতরে সন্দেহ আরো বাড়ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অনেকটাই স্থিতিশীল হওয়ায়। তিনি নিজে বাসায় ফিরতে উদগ্রীব হওয়ায় তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দীর্ঘ ৮১ দিন ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর বাসায় ফিরছেন সাবেক সরকারপ্রধান খালেদা জিয়া। গত ১৩ নভেম্বর এ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। হাসপাতাল থেকে তিনি ঢাকার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান মত ও পথকে জানান, আজ সন্ধ্যা ছয়টার পরে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরবেন বিএনপির চেয়ারপারসন। তাঁর চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সন্ধ্যা ছয়টায় এ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন করারও কথা রয়েছে।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় গত ৯ জানুয়ারি তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে কেবিনে নেওয়া হয়। গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীন ভর্তি হন তিনি। তাঁর চিকিৎসায় ছয় সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এ ছাড়া ঢাকার প্রায় দুটি বেসরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা তাঁর চিকিৎসায় যুক্ত রয়েছেন।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। তাঁর মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিভাগীয় শহরসহ অনেক জেলায় সমাবেশ করে দলটি। এর আগে মানববন্ধন, দোয়া ও মিলাদ, স্মারকলিপি পেশ, অনশনের মতো কর্মসূচি পালন করেন দলটির নেতাকর্মীরা। এ কর্মসূচি এখনও অব্যাহত রয়েছে। তবে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এবং সরকারের বিধিনিষেধের কারণে সমাবেশের মতো কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছে।
দলটির ভাষ্য, সরকার আইনের অজুহাতে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিচ্ছে না। বিদেশে চিকিৎসার অনুমতির প্রশ্নে বিএনপি সরকারের ওপর কতটা চাপ তৈরি করতে পেরেছে, এ প্রশ্নে দলটিও সন্দিহান। শেষপর্যন্ত সরকারের ওপর কতটা চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে-সেই প্রশ্নে দলটির ভেতরে সন্দেহ রয়েছে। তবে দলের চেয়ারপারসন বাসার ফেরার পর নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা হবে। দলটির নেতারা পরিস্থিতিকে তাদের দলের জন্য একটা সংকট হিসেবে দেখছেন।
বিএনপির কোনো কোনো নেতার দাবি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার ইস্যুতে এর মধ্যে দেশি-বিদেশিদের সমর্থন বাড়ায় সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে; পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে বিএনপির লাগাতার কর্মসূচিতে জনমত আরও পক্ষে আসবে এবং এ অবস্থায় ‘বাধ্য হয়ে’ সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেবে সরকার।
অন্যদিকে সরকারি দলের নীতিনির্ধারক মহল মনে করে, বিএনপি খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করছে। তারা আসলে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা চায় না। আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত কাউকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার সুযোগ প্রচলিত আইনে নেই।
বিএনপি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় কর্মরত সবার করোনা টেস্ট করা হয়েছে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে পুরো বাসভবন। সংশ্নিষ্ট চিকিৎসকরা জানান, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের রক্তক্ষরণ আপাতত বন্ধ রয়েছে। তাই তাকে বাসভবনে রেখেই চিকিৎসার চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। এ জন্য তাঁর বাসাতেই চিকিৎসার প্রাথমিক ব্যবস্থা করা হয়েছে।