কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনে নিযুক্ত কূটনীতিক মুহাম্মদ সানিউল কাদেরের বিরুদ্ধে ভারতীয় এক নারীর সঙ্গে ‘যৌনবার্তা বিনিময়, নগ্ন চ্যাট করার’ অভিযোগ উঠে। এর ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার ‘তড়িঘড়ি’ করে তাঁকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। ভারতের কলকাতায় বসে তিনি বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের কাছে দেশ ও সরকারের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচারের সঙ্গে নিযুক্ত ছিলেন, এমন গুরুতর অভিযোগও এবার উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিভিন্ন দূতাবাসে কর্মরত রাষ্ট্রদূত ও কর্মকর্তাদের কার্যক্রম নজরদারি করা নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা সূত্র মত ও পথকে সোমবার এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রমতে, দেশের গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা গত বছরের আগস্ট থেকে অভিযুক্ত ও কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনের প্রথম রাজনৈতিক সচিব সানিউল কাদেরের কর্মকাণ্ড তদারকি করে আসছেন। তিনি কলকাতায় বসে তৃতীয় একটা দেশের কাছে সরকারের তথ্য পাচার করছিলেন বলে গোয়েন্দাদের নজরদারিতে সন্দেহ হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সব দেশের সঙ্গে ভারসাম্যমূলক কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করে আসছে। যা বিভিন্ন দেশের কূটনীতিতে প্রশংসিত হচ্ছে। দেশের দূতাবাসে নিয়োজিত থেকে বিদেশে বসে সানিউল সরকারের দক্ষ কূটনীতিতে সমালোচনা জন্ম দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত চলছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র মত ও পথকে জানায়, অভিযোগ ও ‘নিজের নগ্ন ভিডিও’ প্রকাশ্যে আসার পর সানিউলকে ঢাকায় ডেকে পাঠানো হয়। কলকাতাস্থ বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসানও ঢাকায় এসেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সানিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে। ভারতীয় নারীর সঙ্গে সানিউলের সম্পর্ক ‘হানি ট্র্যাপ’ কী না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে সানিউল যে নারীর সঙ্গে চ্যাট করেন, তিনি আসলে কে, তা নিয়ে এখনও কিছুটা ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। এ অভিযোগেরও তদন্ত হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত থেকেও সরকারের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে গোপন চুক্তি করে তথ্য ফাঁসের অভিযোগে প্রায় সাত বছর আগে একজনের ‘শাস্তি’ হয়। গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের ওই রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে সরকারবিরোধি ও দেশের স্বার্থবিরোধি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠে ২০১৪ সালে। সরকার ও দূতাবাসের ভাবমূর্তিবিরোধী কর্মকাণ্ড, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েক নেতার বিরুদ্ধে কটূক্তি, আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ওই বছরের ৯ আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত দলকে গ্রিসে পাঠায়। গ্রিসে ছয়দিন অবস্থানকালে তদন্ত দল সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পায়।
ওই রাষ্ট্রদূত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি এবং সরকার ও দূতাবাসের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন বলে তদন্ত দলের কাছে প্রমাণিত হয়। সরকারদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগগুলোরও তদন্তে প্রমাণ মেলে। এমনকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্তকাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য সরকারের কাছে অন্যের মাধ্যমে ই-মেইল পাঠান ওই রাষ্ট্রদূত। ২০১৪ সালের জুনে গ্রিসের নিয়ামানোলদায় একটি স্ট্রবেরি খামারে বকেয়া বেতনের দাবি জানানো ৩৫ জন অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিক মালিকপক্ষের গুলিতে আহত হন। মানবিক কারণে পরে তাদের বৈধতা দেয় গ্রিস সরকার। তাদের দেখভালের ব্যাপারে রাষ্ট্রদূত যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেননি, তা তদন্ত দলের কাছে প্রমাণিত হয়। জাতির জনকের তনয়া শেখ হাসিনার সরকার সম্পর্কে প্রবাসীদের কাছে ভুল বার্তা তুলে ধরার জন্য ওই রাষ্ট্রদূত পদক্ষেপ নেননি বলে প্রমাণিত হয়।