ষষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি নৌকা প্রার্থীর হার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ষষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচন

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ষষ্ঠ ধাপে গতকাল সোমবার প্রায় শতভাগ ইউপিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হয়েছে। তবে ইভিএমে ভোটগ্রহণে ধীরগতির কারণে ভোট কম পড়েছে। ইসির পক্ষ থেকে বিষয়টি স্বীকার করে জানানো হয়েছে, এই ধাপে প্রায় ৫৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। এই ধাপে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা অর্ধেকের বেশি ইউপি হেরেছেন।

গতকাল অনুষ্ঠিত ২১৮টি ইউপির মধ্যে ২১৭টি ইউপির বেসরকারি ফলাফলে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জিতেছেন ৯৮টিতে। এর মধ্যে ১২টিতে জিতেছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। অন্যান্য ইউপির মধ্যে শরীয়তপুরে পাঁচটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার সাতটি ও মাদারীপুরের একটিতে কাউকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়নি।

ভোট চলাকালে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখলের অপচেষ্টা ছিল। কয়েকটি এলাকায় অনিয়মের অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘটনাও ঘটেছে। ২২ জেলার ৪২ উপজেলার ২১৮টি ইউপিতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়। এর মধ্যে ২১৬ ইউপিতে ইভিএমে এবং মাত্র দুটিতে ব্যালটে ভোটগ্রহণ হয়।

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সদর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমল চৌধুরী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রিফাত ইসলাম মুরাদকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন। আজমল চৌধুরী পেয়েছেন সাত হাজার ৪৭১ ভোট আর রিফাত ইসলাম মুরাদ পেয়েছেন দুই হাজার ৩৯১ ভোট।

এ ছাড়া জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী বুলবুল খান নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. আব্দুস সামাদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়ে জয়ী হন।

সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখলের চেষ্টা : নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউপিতে দুটি কেন্দ্র দখলের অপচেষ্টা চালানো হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় একদল দুষ্কৃতকারী কেন্দ্র দুটিতে ঢুকে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে থাকে। এ ঘটনায় কিছুক্ষণের জন্য ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে দুষ্কৃতকারীদের ধাওয়া ও লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পুলিশ-বিজিবির ওপর হামলার অভিযোগে দুই যুবককে আটক করা হয়।

নবীপুর ইউপির রিটার্নিং অফিসার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাসরুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউপির এশফাকুল হক মান্না আলিম মাদরাসা কেন্দ্র এবং সকাল ১১টার দিকে শ্রীপদ্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে দুই দল দুষ্কৃতকারী। এতে দুটি কেন্দ্রে কিছুক্ষণ ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। এশফাকুল হক মান্না মাদরাসা কেন্দ্রে ৩৪টি এবং শ্রীপদ্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ১৩টি চেয়ারম্যান পদের ব্যালট বাতিল করা হয়েছে।

কুমিল্লার মুরাদনগরে বিভিন্ন ইউপিতে নির্বাচনী সহিংসতায় অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উপজেলার রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়নে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। গতকাল দুপুর দেড়টায় সাহেবনগর মাহুতিকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরের এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।

এ ছাড়া মুরাদনগর উপজেলার শ্রীকাইল ইউনিয়নের উত্তর পেন্নাই এলাকায় আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচনী সহিংসতায় মোটরসাইকেল ভাঙচুর, মালপত্র লুটপাট, বাড়ি-ঘরে হামলার ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে গুরুতর আহত ছয়জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

শরীয়তপুরের চিকন্দী ইউপিতে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যায় চারটি মোটরসাইকেল ও একটি ট্রাকে দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশের উপপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন, কনস্টেবল শরিফুল ইসলাম আহত হয়েছেন।

শেয়ার করুন