লক্ষ্য অর্জনের চ্যালেঞ্জ প্রকল্পের ধীরগতি

ড. আতিউর রহমান

ড. আতিউর রহমান
ড. আতিউর রহমান। ফাইল ছবি

দুই বছর ধরে সারা বিশ্বেই করোনার তাণ্ডব চলছে। এই তাণ্ডবে বিশ্ব অর্থনীতির গতি-প্রকৃতিতে দেখা দিয়েছে সমূহ অনিশ্চয়তা। বাংলাদেশও এই বৈশ্বিক সংকটের নানামুখী চাপের বাইরে নয়। আমাদের অর্থনীতিও বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে জড়াজড়ি করেই টিকে আছে।

মূলত কৃষিনির্ভর একটি অর্থনীতি যখন রপ্তানি শিল্পনির্ভর অর্থনীতির দিকে হাঁটতে থাকে, তখন তার চাহিদার উৎস হয় বিদেশি ভোক্তারা। তাই তারা ভালো না থাকলে, তারা ব্যবসা-বাণিজ্য ও শ্রমবাজারে আগের মতো যুক্ত না থাকলে আমাদের ব্যবসায়ী তথা রপ্তানিকারকরা তো বেশ চিন্তিত থাকবেনই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর বেশির ভাগই এই সংকটকালে পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পায়নি। সে বিচারে বাংলাদেশ ছিল এক অনন্য ব্যতিক্রম। করোনাকালের দুই বছর ধরেই বাংলাদেশ যেমন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে এই সংকট মোকাবেলা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে, তেমনি বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অনুদানও পেয়েছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ বাংলাদেশের ম্যাক্রো অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এবং শক্তিশালী নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়ার সুদৃঢ় অঙ্গীকার। উন্নয়নকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করে সমাজের নিচের তলার মানুষের জীবন ও জীবিকা সংরক্ষণে দীর্ঘদিনের নীতিচর্চা। সেই সব নীতির সঠিক বাস্তবায়ন। বিদেশি ঋণ সময়মতো শোধ করার প্রশংসিত সংস্কৃতি।

universel cardiac hospital

তাই খুব একটা অবাক হইনি, যখন খবর আসে যে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশ বৈদেশিক সহায়তা রেকর্ড করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এই সময়টায় ৪.০২ বিলিয়ন ডলার বিদেশি সহায়তার অর্থ ছাড় হয়েছে। এর আগে এই পরিমাণ বিদেশি সহায়তা কোনো অর্থবছরের প্রথমার্ধে ছাড় হয়নি। এই অর্থের বেশির ভাগই এসেছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা থেকে। সবচেয়ে বেশি এসেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বা এডিবি থেকে (১.৬২ বিলিয়ন ডলার)। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ আগের যেকোনো অর্থবছরের চেয়ে বেশি বিদেশি ঋণ সহায়তা ছাড় করাতে পারবে বলে মনে হয়। উল্লেখ্য, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭.১০ বিলিয়ন ডলার ছাড় করাতে পেরেছিল। এর আগের অর্থবছরে (২০১৯-২০) এ অংশ ছিল আরো খানিকটা বেশি (৭.৩৮ বিলিয়ন ডলার)। যেটি লক্ষ করার বিষয়, তা হলো গত ছয় মাসের প্রতিশ্রুতি ছিল ৪.৩৯ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সহযোগিতা। আর এর মধ্যে ছাড় হয়েছে ৪.১৭ বিলিয়ন ডলার। আর বৈদেশিক ঋণ ছাড় করা গেছে ৪.০২ বিলিয়ন ডলার। বাকি ০.১৫ বিলিয়ন ডলার মিলেছে অনুদান হিসেবে। এই অনুদানের প্রায় পুরোটাই ছিল প্রকল্প অনুদান।

গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের চেয়ে এই বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান ৩৯.১৪ শতাংশ বেশি। উল্লেখ্য, এই প্রাপ্তির ভেতর বিনা প্রতিশ্রুতিতে ভারত ও রাশিয়া থেকে পাওয়া মোট ০.৪৩ বিলিয়ন ডলারও আছে। এর বেশির ভাগই রাশিয়া থেকে এসেছে (০.৩৬ বিলিয়ন ডলার)।

নিঃসন্দেহে এমন সংকটকালে বিদেশি ঋণ ও অনুদানের প্রবাহের ফলে সরকারকে স্বাস্থ্য সংকট মোকাবেলা ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো চালু রাখার পাশাপাশি পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নের জন্য অর্থকষ্টে পড়তে হয়নি। তাই বড় ধরনের কৃচ্ছ্রসাধনও করতে হয়নি। প্রশ্ন উঠতে পারে, এই টাকা ঠিকঠাকমতো খরচ হচ্ছে কি না? সময়মতো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে কি না? কেননা আজ হোক, কাল হোক, টাকা তো আমাদের ফেরত দিতে হবে। ঠিকমতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে মানুষের কাজের সুযোগ বাড়বে, অবকাঠামোর উন্নতি হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। আমাদের রাজস্ব আয় বাড়বে। বাড়বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। আর তাহলে বিদেশিদের টাকা ফেরত দেওয়া তো কঠিন হওয়ার কথা নয়।

আমাদের কৃষির প্রবৃদ্ধিও বেশ ভালো। তাই খুব বেশি খাদ্য আমদানি করতে হয় না। প্রবাসী আয় বৃদ্ধির গতিও বেশ ভালো। শুরুতে কিছুটা শ্লথ থাকলেও হালে গতি পাচ্ছে। অর্থবছর শেষে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি উঠে যেতে পারে। আর রপ্তানি আয়ও খুবই গতিশীল। গত ছয় মাসে তা বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ হারে। অবশ্য আমদানির হারও বেশি। এর বড় অংশ আবার শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল বাবদ। তাই প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহতই থাকবে বলে মনে হয়।

দুই বছর আগে যখন কভিড-১৯ জেঁকে বসে, তখন আমরা বেশ দুশ্চিন্তায়ই পড়ে গিয়েছিলাম। সে সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই সাহসের সঙ্গে সম্প্রসারিত মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির সংমিশ্রণে এক লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার (যা এখন এক লাখ ৫১ হাজারে উন্নীত) প্রণোদনা ঘোষণা করেন। এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, খুদে ও মাঝারি শিল্প, বড় শিল্প, রপ্তানি সহায়ক শিল্প, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান—কেউ বাদ পড়েনি। করোনা মোকাবেলায় ব্যস্ত সব কর্মীই এই কর্মসূচির আওতায় এসেছিলেন। তবে এসব কর্মসূচির ঠিকঠাকমতো বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ তো ছিলই। করে করে এই বাস্তবায়নের মান উন্নত করার চেষ্টা চলছে।

এরপর এলো টিকা। কোত্থেকে টাকা আসবে, তা না ভেবে বেশির ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নিল সরকার। এটিও ছিল খুবই সাহসী উদ্যোগ। এর আগে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংক থেকে ঋণ ও সহায়তা নেওয়ার পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতি সংস্থাগুলোর কাছে জরুরি সহায়তা চায়। বাংলাদেশের সক্ষমতার সুনাম, ঋণ পরিশোধের সংস্কৃতি, পুরো সমাজকে যুক্ত করে টিকাসহ সামাজিক সুরক্ষা কাজের অভিজ্ঞতা এবং শক্তিশালী ম্যাক্রো অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে এসব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বেশ দ্রুতই সাড়া দেয়। এ জন্য আমাদের বৈদেশিক সম্পদ সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ দিতেই হয়। আগামী দিনগুলোতে আমাদের বাজেট ও নীতি সহায়তা চাইতে হতে পারে। সে জন্য বেশ কিছু সংস্কারের প্রশ্ন হয়তো উঠবে। সেসব প্রশ্ন মোকাবেলা করে স্মার্ট অর্থনৈতিক কূটনীতির প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে। আমার ধারণা, আগামী এপ্রিলেই বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্ত সভায় এমন প্রশ্ন উঠবে। সে জন্য নিশ্চয় সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছেন।

এ কথা মানতেই হবে এসব ঋণ দীর্ঘমেয়াদি। গ্রেস পিরিয়ড লম্বা। সুদের হারও খুব বেশি নয়। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নে আরেকটু মনোযোগী হলে এবং বেশ কিছু নিয়ম-নীতি সহজ করা গেলেই এ ধরনের বিদেশি ঋণ ও অনুদান সংগ্রহ করা মুশকিল হবে না। তা ছাড়া প্রায় দেড় যুগ ধরে বাংলাদেশের অসামান্য হারে মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি, গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হারের কমতি এবং বিদ্যুৎসহ বিরাট বিরাট অবকাঠামো প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প ঠিকঠাকমতো বলতে পারলে কেন আমরা বিদেশি সহায়তা আরো বেশি করে পাব না? প্রায় দেড় দশক ধরেই দেখতে পাই বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি ও ছাড় বেড়েই চলেছে। দ্বিপক্ষীয় সহায়তায় জাপান সবার ওপরে। জাইকা আমাদের অনেক মেগাপ্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। আড়াইহাজার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি দ্রুত সম্পন্ন করা গেলে জাপানি বড় বড় বিনিয়োগকারীর ঢল নামবে। বহুপক্ষীয় অংশীজনের মধ্যে এডিবি ও বিশ্বব্যাংক খুবই দ্রুত সহায়তার ডাকে সাড়া দিচ্ছে। এসব কথা মনে রেখেই আমাদের স্মার্ট অর্থনৈতিক আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে পাইপলাইনে থাকা ৫০ বিলিয়ন ডলারের মতো প্রতিশ্রুত বিদেশি সহায়তাকে কী করে বাস্তবায়ন পর্যায়ে আনা যায় সেদিকেও আমাদের নজর জোরদার করতে হবে। এডিবি আজকাল বাংলাদেশের ব্যক্তি খাতের অংশীজনকেও বৈদেশিক ঋণ সহায়তা দিতে খুবই আগ্রহী। ব্যক্তি খাতের বেশ কিছু প্রকল্পেও তারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

অবকাঠামোসহ সব প্রকল্প শুরু এবং শেষ না করা গেলে খরচ বেড়ে যায়। অর্থের অপচয় হয়। প্রকল্পের লক্ষ্যগুলো অর্জন করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়। যেসব কারণে এমনটি হয় সেসব দূর করা গেলে প্রকল্প ঋণের পরিমাণ আরো বাড়বে। বিশেষ করে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই পেশাদারিভাবে করা, সম্ভাব্য ব্যয়ের যথার্থ প্রক্ষেপণ, প্রভাবমুক্ত থেকে উপযুক্ত বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার নিয়োগ, কাজ ও খরচের নিয়মিত আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর মনিটরিং এবং সব পর্যায়ে জবাবদিহির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে না পারলে প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে অস্বস্তি ও অপচয় দূর করা বেশ কঠিনই হবে বলে মনে হয়। ইদানীং রেল বিভাগের বেশ কিছু প্রকল্প ঘিরে এ ধরনের বিড়ম্বনা দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেল প্রকল্পটি বারবার মূল্যবৃদ্ধি এবং বাস্তবায়নের সময় বৃদ্ধির কারণে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। ভারতীয় ‘লাইন অব ক্রেডিট’ সমর্থিত রেল প্রকল্পগুলোও এ ধরনের বাস্তবায়ন জটিলতায় ভুগছে।

বাংলাদেশে ধীরে ধীরে বহুপক্ষীয় ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। আর এই ঋণের বেশির ভাগই প্রকল্প ঋণ। বাংলাদেশ এখন অবকাঠামো ও শিল্পায়নের জন্য বেশি করে কারিগরি ও জ্ঞানভিত্তিক সহায়তা পেতে আগ্রহী। তার জনশক্তিকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী গড়ে তুলতে এরই মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ‘সিপ’ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে যেতে বাংলাদেশ বেশি উদগ্রীব। চলমান করোনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ খাতে আরো বেশি আন্তর্জাতিক ঋণ ও অনুদান সহায়তা সংগ্রহে বাংলাদেশ এখন কাজ করছে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ প্রতিশ্রুত আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি তার পুরো প্রবৃদ্ধির ধারাকে সবুজ করার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ কৌশল নির্ধারণ করেছে। মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার আলোকে বাংলাদেশ বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় সবুজ আর্থিক সহায়তা প্রত্যাশা করছে। বিশ্বের নামিদামি বিনিয়োগকারীদেরও এই কর্মযজ্ঞে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। এ মাসের শেষ দিকে বদ্বীপ পরিকল্পনা নিয়ে ঢাকায় বসতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্মেলন। বিশ্বব্যাংক ও এডিবি এই সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি সহ-আয়োজকের ভূমিকা পালন করবে। সঙ্গে থাকবে নেদারল্যান্ডসের ঢাকা দূতাবাস। এই সম্মেলনে নিশ্চয় বাংলাদেশের সুদূরপ্রসারী পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন কৌশলে বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় অংশীজনদের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট আলাপ-আলোচনা হবে।

সুদূরপ্রসারী সেই সম্ভাবনার আলোকেই বাংলাদেশ তার কৌশলগত উন্নয়ন পরিকল্পনা সাজিয়েছে। এখন দেখার বিষয় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিশ্বের বিস্ময় বাংলাদেশের এই অন্তর্ভুক্তিমূলক সবুজ প্রবৃদ্ধির ডাকে কিভাবে সাড়া দেয়।

লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর

শেয়ার করুন