সবকটা জানালা খুলে দাও না, একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার, আমায় গেঁথে দাও না মাগো, দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা, পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই, ডাকে পাখি খোল আঁখি, কাল সারারাত ছিল স্বপ্নের রাত, আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে, কতো যে তোমাকে বেসেছি ভালো, কাঠ পুড়লে কয়লা হয়, এই অন্তরে তুমি ছাড়া নেই কারো, আমার মনের আকাশে আজ জ্বলে শুকতারা, তোমার হয়ে গেছি আমি, মায়ের মাথার সিঁথির মতো লম্বা সাদা পথ, হৃদয়ের চেয়ে ভালো কোনো ফুলদানি নেই- গানগুলো কালজয়ী।
এসব গান যার হাত ধরে এসেছে, এ প্রজন্মের অনেকেই হয়তো জানে না কী তার নাম। ৩১ পেরিয়ে ৩২ বছর হতে চললো তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। তাকে নিয়ে করপোরেট আয়োজনে কোনো হইচই নেই, কোনো স্মরণসভা-সেমিনারও নেই।
এদেশের পথে প্রান্তরে ঠিকই বাজে তার গান আজও, বাজবে চিরকাল। তিনি কালজয়ী গীতিকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বাবু।
দীর্ঘদিন ধরেই তার অনেক সহকর্মী আফসোস করে আসছিলেন একটা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি বা সম্মান যেন দেওয়া হয় তাকে। অবশেষে সেই দাবি পূরণ হলো। সংগীতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একুশে পদক পাচ্ছেন নজরুল ইসলাম বাবু। তাকে মরণোত্তর এই পদক দেওয়া হবে।
খবরটি সংগীতাঙ্গনে বেশ আনন্দ বয়ে এনেছে। অনেকেই বাবুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তার জন্য প্রার্থনা করছেন। সেই সঙ্গে মৃত্যুর ৩২ বছর পর হলেও নজরুল ইসলাম বাবুকে একুশে পদক দেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান গানের মানুষ ও সংগীতপ্রেমীরা। দেরিতে হলেও গুণের কদর হয়, সেই কথাও বলছেন অনেকে।
ক্ষণজন্মা এই গুণী মানুষের জন্ম ১৯৪৯ সালের ১৭ জুলাই, জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জের চরনগর গ্রামে। তার বাবা বজলুল কাদের ছিলেন স্কুলশিক্ষক। মা রেজিয়া বেগম গৃহিণী। বাবা বজলুল কাদেরের সংগীতের প্রতি অনুরাগ ছোটবেলা থেকেই বড় সন্তান নজরুল ইসলাম বাবুকে প্রভাবিত করে। চার ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে বাবু ছিলেন সবার বড়। স্থানীয় স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে মামার কর্মস্থল বরিশালে চলে যান। বরিশাল বিএম স্কুল অ্যান্ড কলেজে মাধ্যমিক এবং পরে জামালপুরের আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও বিএসসি ডিগ্রি নেন।
২১ বছরের টগবগে তরুণ নজরুল ইসলাম বাবু ১৯৬৯ সালে তৎকালীন সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের ছাত্রনেতা হিসেবে বেশ নামডাক করেছিলেন। একদিন তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে তৎকালীন সামরিক জান্তা। একসময় তিনি আত্মগোপন করেন। চলে যান ভারতে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ক্যাম্পে যোগ দেন।
দেশ স্বাধীন হলে তিনি আবার লেখাপড়া, সাহিত্য ও সংগীতচর্চা শুরু করেন। সিনেমার প্রযোজনাও শুরু করেছিলেন তিনি।
১৯৯০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আসছে সেপ্টেম্বরে তাকে হারানোর ৩২ বছর পূর্তি হবে। মহাকাল তাকে বেশি দূর যেতে দেয়নি ঠিকই, কিন্তু নজরুল ইসলাম বাবু এই বাংলায় প্রতিদিন ফিরে আসেন তার লিখে যাওয়া সব প্রেম-বিরহ ও দেশের গানে গানে।