নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে জনপ্রত্যাশিত ‘অনুসন্ধান কমিটি’ (সার্চ কমিটি) গঠিত হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান করে (সভাপতি) অনুসন্ধান কমিটি গঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের অনুমোদনের পর আজ শনিবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গতকাল শুক্রবার এই কমিটির অনুমোদন দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠায় বঙ্গভবন। কমিটি গঠনের ১৫ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করার বাধ্যবাধকতা আছে সদ্য পাস হওয়া ইসি আইনে। সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ ইসি গঠনের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদেরকে বাছাই করা হবে অনুসন্ধান কমিটির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
গত ২৭ জানুয়ারি নানা তর্ক-বিতর্কের পর জাতীয় সংসদে পাস হয় ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ বিল। এর আগেও সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠিত হয়েছিল। তবে মুক্তিযুদ্ধে পর পঞ্চাশ বছরের মধ্য এবারই প্রথমবারের মতো আইনের মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠিত হয়। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ইসি গঠনে আইন প্রণয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। আইন না থাকায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সময় থেকে সার্চ কমিটি গঠন করে ইসি গঠিত শুরু হয়, যা অনুসরণ করেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও। ইসি আইন নিয়ে সন্দেহের দোলাচলে থাকার কথা শুরুতেই জানিয়েছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তবু সদ্য আইনে গঠিত সার্চ কমিটিকে স্বাগত।
কারণ, শক্তিশালী ও বিতর্কমুক্ত ইসি গঠনে সার্চ কমিটিকে যথেষ্ট স্বাধীনতা ও সুযোগ সদ্য প্রণীত আইনে দেওয়া হয়েছে। এখন এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে যথাসম্ভব জনকল্যাণমুখী করতে কমিটি সচেষ্ট হতে পারে, যাতে সঠিক ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেওয়ার পথ প্রশস্ত হয়। কমিটির গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হবে- নতুন ইসি এমন হতে হবে, যাতে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে ভোটারদের আস্থা থাকে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো বিষয়ে তর্ক ও বিতর্ক, মত-দ্বিমত গণতান্ত্রিক সমাজের অনুষঙ্গ। তবে দলীয় স্বার্থে নয়, দেশ ও জনগণের স্বার্থে এবার যেন সব বিতর্কের অবসান হয়।
আমাদের প্রত্যাশা, কমিটি জনপ্রত্যাশা পূরণে জোরোলো ভূমিকা রাখবে। ইসি গঠনে এবার যে কমিটি হয়েছে, তারা এখন চাইলেই এমন একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারে। যা ইসি গঠনে মাইলফলক হয়ে থাকতে পারে। সেটা কেবল আগামী দিনের নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্যই নয়, অন্যান্য সাংবিধানিক ও আধা সাংবিধানিক পদধারীদের নিয়োগেও আমাদের অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য বাছাই প্রক্রিয়া বের করায় সহায়ক হতে পারে। অনুকরণীয় হয়ে থাকতে পারে।
কারণ, ইসি আইনের ৪ (১) ধারায় নির্ধারিত অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি হলো—‘অনুসন্ধান কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করিয়া দায়িত্ব পালন করিবে এবং এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, সততা ও সুনাম বিবেচনা করিয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ দানের জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট সুপারিশ করিবে।’
এই দায়িত্ব ও কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য কমিটিকে আইনের ৩ (২) ধারায় তার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এ দুটি বিধানকে কাজে লাগালে অনুসন্ধান কমিটির পক্ষে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে সত্যিকারের অনুসন্ধানের মাধ্যমে যোগ্য, অভিজ্ঞ, সৎ ও সুনামসম্পন্ন ব্যক্তিদের ইসি নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি। রাজনৈতিক দলগুলোকেও আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করা গণতন্ত্র, দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না- এটাও দলগুলোকে মনে রাখতে হবে। আইনে উল্লেখিত ‘স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ’ করে কমিটি দায়িত্ব পালন করবে বলে আমরা আস্থা রাখি।