লিবিয়ার বহুল আলোচিত জওয়ারা আটককেন্দ্রের নিরাপত্তারক্ষী হিসবে কাজ করা দুই বাংলাদেশিকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন সিসিলি প্রদেশের পালেরমোর আদালত।
জওয়ারা কারাগারের চার সাবেক বন্দি এই দুই বাংলাদেশির বিরুদ্ধে আনা নির্যাতন ও চাঁদাবাজির অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের ২০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
দন্ডপ্রাপ্ত এ দুই বাংলাদেশি হলেন ৩৭ বছর বয়সী পজুরল সোহেল ও ৩৩ বছরের বয়সী এমডি হারুন। এই ধরনের মামলায় ইতালির বিচার বিভাগ প্রদত্ত সর্বোচ্চ সাজা এটি।
ইতালির সংবাদমাধ্যম ইটালপ্রেস জানায়, সিসিলির পালেরমোতে একটি আদালত তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অভিবাসন, মানবপাচার এবং চাঁদাবাজির জন্য অপহরণে সহায়তার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
ইটালপ্রেস জানিয়েছে, এই দুই বাংলাদেশি লিবিয়ার জুওয়ারার কারাগারে প্রহরী ছিলেন, যেখানে দেশের অন্যান্য বন্দিকেন্দ্রের মতোই নির্বাসিতদের ওপর নির্যাতন, ধর্ষণ এবং সবধরনের অশোভন আচরণ করা হয়।
২০২০ সালের ২৮ মে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির লাম্পেদুসায় আসা অন্য চার বাংলাদেশি অভিবাসী সিসিলির রাগুসাতে স্থানান্তরের সময় এই দুই অভিযুক্তকে দেখতে পেলে সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে জানান।
পরবর্তী সময়ে তারা ইতালি পুলিশের কাছে জওয়ারা আটককেন্দ্রে তাদের ওপর হওয়া নির্মম অত্যাচারের বর্ণনা দেন। ভুক্তভোগী বাংলাদেশি অভিবাসীরা সে সময় কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করেছিলেন যে, জওয়ারা কারাগারের এই দুই নিরাপত্তারক্ষী ছাড়াও সেখানে থাকা মানবপাচারকারী ও মিলিশিয়া নেতারাও ইতালিতে এসে পৌঁছেছে।
ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্য গ্রহণের ভিত্তিতে সিসিলির পালেরমো দ্বীপের আদালতে শুরু হয় মূল বিচার প্রক্রিয়া ও বিশদ তদন্তের কাজ।
ইটালপ্রেস জানায়, দুই অভিযুক্তের ফেসবুক প্রফাইল ট্র্যাক করে ইতালির আগ্রিজেন্তো শহরে তাদের উপস্থিতি শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পুলিশ। ২০২০ সালের ৬ জুলাই তাদের গ্রেপ্তার করে স্থানীয় পুলিশ।
গ্রেফতারের পর দুই অভিযুক্তের সামনে অভিযোগকারীদের হাজির করা হলে তারা সঙ্গে সঙ্গেই তাদের চিনতে পারে। ভুক্তভোগীরা তাদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং ঘটে যাওয়া নির্যাতনের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেন।
পুলিশ অভিযুক্ত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়। ফেসবুকে ভুক্তভোগী অভিবাসীদের প্রকাশিত ভিডিও এবং ছবিতে দেখা যায়, দুই অভিযুক্ত বাংলাদেশি প্রহরী বন্দিদের ওপর নির্মম নির্যাতন করছেন এবং নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছেন।
বাংলাদেশে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায় আসামিদের স্থানীয় প্রতিনিধিদের কাছে বাংলাদেশে থাকা অভিবাসীদের পরিবারগুলোর একজনের স্ত্রীর দাবিকৃত মুক্তিপণ পরিশোধ করছেন।
বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায়, অভিযুক্ত দুই বাংলাদেশি জওয়ারা কারাগারে প্রহরী থাকা অবস্থায় কালাশনিকভ অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছেন এবং বিভিন্ন ঢংয়ে ছবি তুলছেন। তাদের হাতে থাকা অস্ত্রগুলো দিয়ে জওয়ারা আটককেন্দ্রের বন্দিদের নির্যাতন করা হতো।
আদালতের নির্দেশে পরিচালিত বিভিন্ন ফরেনসিক পরীক্ষাগুলোও বাদীদের দেওয়া প্রমাণের তালিকার সঙ্গে যুক্ত করে পুলিশ। ফরেনসিক রিপোর্টগুলোতে অভিযুক্তদের শরীরে নির্যাতনের অসংখ্য দাগের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
২০১১ সালে লিবিয়ার স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে দেশটি ইউরোপে পৌঁছানোর জন্য হাজার হাজার অভিবাসীর ট্রানজিট রুটে পরিণত হয়। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে লিবিয়া নরক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
দেশটির বিভিন্ন আটককেন্দ্রে অভিবাসীদের ওপর চলে স্থানীয় মিলিশিয়া ও পাচারকারীদের নির্যাতন। ভুক্তভোগী অভিবাসীরা ইনফোমাইগ্রেনন্টসের কাছে নিয়মিত এসব নির্যাতনের ব্যাপারে যোগাযোগ করে থাকেন।
সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস