ব্যক্তি মালিকানায় লাগানো গাছ কাটতেও লাগবে অনুমতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন আইন, ২০২২’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। খসড়া আইন অনুযায়ী, ব্যক্তি মালিকানায় লাগানো বড় গাছ কাটতেও সরকারের অনুমতি নিতে হবে। সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা বৈঠকে খসড়া আইনটি অনুমোদন দেওয়া হয়।

আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।

তিনি বলেন, এটার মাধ্যমে সব বনাঞ্চলকে প্রটেকশন দেওয়া হয়েছে। সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে লাগানো যে গাছ রয়েছে সেগুলোও এর আওতায় আসবে। এখানে বুঝতে হবে, স্থায়ী গাছের কথা বলা হয়েছে। লাউ গাছ কাটতে কোনো সমস্যা নেই।

‘মানুষ যারা সাধারণ বাগান করবে বা স্থায়ী যে গাছ লাগাবে, সেগুলোও তারা তাদের ইচ্ছা মতো কাটতে পারবে না। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এরকম নিয়ম আছে।’

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সৌদি আরবে…ইউ ক্যান নট ইমাজিন, আমার বাড়িতে একটি গাছ পড়ে গেছে এটা আমি সিটি করপোরেশন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কাটতে পারবো না। এটা ভারতেও আছে। এটাকে ভালোভাবে ইমপ্লিমেন্ট করতে বলা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমি যতটুকু জানি, আগেও এরকম একটি প্রভিশন ছিল। এটাকেই একটু সহজ করে কর্তৃপক্ষকে অনুমতি দিতে বলা হয়েছে। কারণ একটা মানুষ বিপদে পড়লো, তার গাছ ভেঙে গেলো, এটা যদি সাতদিন পড়ে থাকে, সময় লাগে অনুমতি নিতে, সেটা হলে তো মুশকিল। তাই এটাকে একটু সহজ করতে বলা হয়েছে, এটা অনলাইনে করা যায় কি না।

তিনি বলেন, ফরেস্ট ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট অর্ডিন্যান্স ছিল ১৯৫৯ এর। এর আওতায় এটা চলতো। সেটাকে হালনাগাদ করে আইন হিসেবে নেওয়া হয়েছিল। অনেকগুলো বিষয় আছে। যেমন- এটা একটা করপোরেশন হবে। করপোরেশনের একজন চেয়ারম্যান এবং পরিচালক থাকবেন। তারা এটাকে প্রশাসনিকভাবে দেখবেন। বোর্ড থাকবে সেটা নীতিগত বিষয়গুলো তদারকি করবে। এর কাজ হবে করপোরেশনের অধীনে উৎপাদিত কাঠ বা কাঠের আসবাবপত্র আইনের অধীনে আসবে। করপোরেশনের অধীনে রাবার বাগান থেকে রাবার কীভাবে আহরণ করা যায় এবং উন্নয়ন করা যায় তা এর মধ্যে থাকবে। বনজ সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন কৃত্রিম রাবার পণ্য বন্ধে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব শিল্প সৃষ্টির বিষয়টি এখানে থাকবে।

সংরক্ষিত বনের পাশাপাশি অন্যান্য বনাঞ্চলকেও এই আইনে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অন্যান্য বনজ শিল্প, যেমন- আগর, যেটা সিলেটের একটি এলাকায় হয়। পাশাপাশি সরকারি বন ছাড়াও অন্যান্য যেসব বন আছে, সেগুলোকেও সংরক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। যেমন- পদ্মায় আমরা ওপারে একটি বড় বন করেছি। যদিও এটি বন শিল্পের সংরক্ষিত বন নয়। তারপরও এ বনগুলোকেও সংরক্ষণ করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর যদি যান, দুপাড়ে আমরা যে বন করেছি এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভবত গভীর অরণ্য। এতো গভীর বন সুন্দরবনেও আমার ধারণা নেই। ওখানে কিন্তু বিশাল এলাকায় আমাদের ফরেস্ট। এখানে আমরা গোখরা সাপ, অজগর, বানর, হরিণ আরও অনেক রকম পোকা-মাকড় ছেড়ে দিয়েছি। এটাকেও এর আওতায় আনা হয়েছে। যদিও এটা বন না কিন্তু তবুও এটাকে নিধন করা যাবে না। এগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে।

তিনি বলেন, এটা ব্যাপক প্রচারণা করতে বলা হয়েছে। কেবিনেট থেকে বলা হয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয় এই আইনগুলোর কমপালশনগুলো বাস্তবায়নের আগে প্রমোশন ক্যাম্পেইন করে মানুষের দৃষ্টিতে আনতে হবে।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, অ্যালেঙ্গা থেকে যে রোডটা হাটিকুমরুল পর্যন্ত সেখানে ৭৫ হাজার গাছ কাটতে হয়েছে। যখন চার লেন রোড করা হলো। এখন কিছু করার নেই। ৭৫ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। আমি নিজে আড়াই লাখ গাছ বুনে এসেছি এটার জন্য। আগেই বোনা শুরু করেছি। আমি শুরু করে দিয়ে এসেছি। আমার ধারণা এগুলো এতদিনে বোনাও হয়ে গেছে। সুতরাং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যেটা কমপলসারি, সেটা তো করতে হবে।

এ সময় কক্সবাজারে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বিসিএস প্রশিক্ষণ একাডেমির জায়গা বরাদ্দের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, বিসিএস প্রশিক্ষণ একাডেমির জন্য কক্সবাজারে যে জায়গা দেওয়া হয়েছে সেটা আমি পুরোটা জানি না। এটা জনপ্রশাসন দেখছে। আমি যতটুকু দেখেছি, যে জায়গায় গাছ নেই সেখানে স্থাপনাগুলো হবে।

শেয়ার করুন