বাস ডাকাতির সময় ধর্ষণের শিকার ‘দুই তরুণী’র সন্ধানে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

গ্রেপ্তার ডাকাতদের ছয়জন
গ্রেপ্তার ডাকাতদের ছয়জন। সংগৃহীত ছবি

রাজধানীর উত্তরার আব্দুল্লাহপুরে চলন্ত বাসে এক চিকিৎসকের ডাকাতির শিকারের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে একের পর এক বাস ডাকাতির ভয়ঙ্কর তথ্য বেরিয়ে আসছে। ওই এক ঘটনা তদন্তে নেমে ঢাকার গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ অন্যান্য জেলার অনন্ত আটটি চাঞ্চল্যকর বাস ডাকাতির তথ্য উদঘাটন করেছে। এরমধ্যে বগুড়া থেকে ঢাকায় আসার পথে ‘সোনার তরী’ পরিবহনের একটি বাস ডাকাতির সময় দুই নারী যাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলেও জানতে পেরেছে ডিবি। এখন ওই দুই তরুণীর সন্ধানও চলছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একজন কর্মকর্তা পাঠকপ্রিয় একটি দৈনিকের প্রতিবেদককে বলেন, ২০ জানুয়ারি আব্দুল্লাহপুরে বাসে ডাকাতির শিকার চিকিৎসকের মামলার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে বাস ডাকাত চক্রের অন্তত ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা সাভার, আশুলিয়া, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন রুটে সাম্প্রতিক সময়ে ডাকাতি করেন। এই চক্রের একাধিক সদস্য রিমান্ডে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। বগুড়া থেকে ঢাকার পথে একটি বাসে ডাকাতির পর দুই নারী যাত্রীকে তাদের গ্রুপের চারজন মিলে ধর্ষণ করেন বলেও জানান। তবে এখনও ওই দুই নারীর পরিচয় বা সন্ধান মেলেনি।

ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ওয়াহেদুল ইসলাম বলেন, ডাকাতদের তথ্যের বিষয়ে নিশ্চিত হতে ভুক্তভোগী দুই তরুণীকে দরকার। তাই তাদের সন্ধান চলছে। ঘটনাটি সাভার থেকে শুরু করে মির্জাপুর থানা এলাকার মধ্যে ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। ওই দুই থানাকে জানানোর পর তারাও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।

ডিবি বলছে, গত ১৪ জানুয়ারি বগুড়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সোনার তরী পরিবহনের বাসটি টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা মোড়ে এলে ডাকাতির কবলে পড়ে। বেশ কয়েক ডাকাতকে গ্রেপ্তারের খবরের পর পরিবহন কর্তৃপক্ষ ডিবিকে জানালে ওই চক্রটিরও সন্ধান শুরু হয়। এরপরই ওই ডাকাতিতে জড়িত নাঈম হোসেন (২০), রাসেল আকন্দ (২৭), রফিকুল ইসলাম (২১), মজিদুল ইসলাম (৩৮), আবদুল মজিদ (৩৮) ও আলমগীর প্রধানকে (৩২) গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এই গ্রুপের সুমন ও শাহীন নামে দুইজন পলাতক রয়েছেন।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে তদন্ত সংশ্নিষ্ট ডিবি সূত্র জানায়, সোনার তরী পরিবহনের বাসটি ১৪ জানুয়ারি বিকেল ৫টার দিকে বগুড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। বাসে আগে থেকেই ৩৮ জন যাত্রী ছিলেন। যমুনা সেতু পার হয়ে এলেঙ্গা থেকে সাত থেকে আটজন যাত্রী তোলা হয়। তাদের কয়েকজন ইঞ্জিন কাভারে বসে ছিল। বাসটি সাভার এলাকায় আসার পর ডাকাতরা বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। এরপর তারা বাসটি উল্টা টাঙ্গাইলের দিকে চালাতে থাকেন। সারারাত চলার পর ভোরের দিকে তারা বাসটি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকায় ফেলে পালিয়ে যান।

ওই বাসটির চালক ও হেলপার পুলিশকে বলেছেন, এলেঙ্গা থেকে ওঠা যাত্রীরাই ডাকাত। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাভারের গেন্ডা এলাকায় আসতেই তাদের ভয়ঙ্কর রূপ বেরিয়ে আসে। যাত্রীবেশী এক ডাকাত বিনা উসকানিতেই হেলপারকে ধমকাতে থাকেন। তাকে কেন নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে না, সেই দাবি তুলে মারধর করতে থাকেন। এই কাজে সায় দেন আরও কয়েকজন। চালক বাসটি থামাতেই অস্ত্র ধরে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেন এক ডাকাত। এরপর চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারের চোখ-মুখ ও হাত-পা বাঁধা হয়।

বাসটির চালক মো. পাভেল জানিয়েছেন, বাসে থাকা ৩৮ যাত্রীর অনেকেই চন্দ্রা, বাইপাইল এলাকায় নেমে যান। কিন্তু তখনও ডাকাত দলটিসহ ২০ থেকে ২৫ যাত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে তিন নারী যাত্রীও ছিলেন। চোখ বাঁধা থাকায় এর বেশি কিছুই বুঝতে পারেননি তারা। ভোরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ডাকাতরা গাড়ি রেখে পালিয়ে যান। ওই সময়ে নারী যাত্রীদের আর দেখেননি তারা।

ডিবির তেজগাঁও বিভাগের তদন্ত সংশ্নিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার ডাকাত সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ডাকাতির একপর্যায়ে বাসে থাকা তিন নারীর মধ্যে দুই তরুণীকে পেছনের আসনে নিয়ে ধর্ষণ করেন শাহীন ওরফে পেটকাটা শাহিন ও জাকির। পরে ওই দুইজন ছাড়াও সুমন ও রফিকসহ মোট চারজনে মিলে আবার দুই তরুণীকে ধর্ষণ করেন।

গ্রেপ্তার ডাকাতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য উদ্ধৃত করে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সেই বাসটি মির্জাপুরে ভোজ্যতেলের একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা খায়। তখন সেটি থামিয়ে চালক-হেলপার নেমে এলে ডাকাতরা ট্রাকটি নিয়েই পালিয়ে যান। সেটি নারায়ণগঞ্জের কোথাও ফেলে রাখা হয় বলেও জানিয়েছেন ডাকাতরা।

শেয়ার করুন