সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) করার প্রস্তাব দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। পাশাপাশি সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে নির্বাচন কমিশনার করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ডা. জাফরুল্লাহ এই প্রস্তাব করেন।
কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। তার আগে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন করেছে সরকার। এই কমিটি আইন মোতাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি বরাবর যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করবে। সে লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নামও চাইবে তারা।
জাফরুল্লাহ বলেন, আজ যদি প্রকৃত নির্বাচন করতে হয়, গণতন্ত্র ফেরত দিতে হয়, জনগণকে ভোটের অধিকার ফেরত দিতে হয়, তাহলে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন দরকার। বর্তমান আইনে সেই ব্যবস্থা নেই। এমন অবস্থায় অনেক রাজনৈতিক দলই সার্চ কমিটির কাছে কারও নাম প্রস্তাব করেনি। তবে কয়েকটা নাম আপনারা বিবেচনায় আনতে পারেন, সাখাওয়াত হোসেন আগে নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। তাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হলে তিনি পথ-ঘাট চেনেন, শক্তভাবে কাজগুলো করতে পারবেন। তার সঙ্গে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ইকবাল করিম ভূঁইয়া, তিনি আজিজ নন, সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে তার সুনাম আছে। বদিউল আলম মজুমদার ও বিচারপতি নাজমুন আরা, সুলতানা কামালের মতো সত্যিকারে সজ্জন ও সাহসী লোকজনদের কমিশনে আনলে কমিশন কিছুটা বিতর্কমুক্ত থাকবে।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, সার্চ কমিটিতে যাদের নাম এসেছে তারা তাদের সম্পদের হিসাব দেননি, এ অবস্থায় তাদের ওপর মানুষের আস্থা থাকবে কী করে?
সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশকে ১৭টি প্রদেশে বিভক্ত করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় সরকার, সর্বদলীয় সরকার কিংবা নির্দলীয় সরকার যেটাই করুন না কেন, অন্ততপক্ষে তাদের দুই বছর সময় দিতে হবে। তাহলে সংবিধানের যেসব ত্রুটি আছে সেগুলোর পরিবর্তন হবে। তবে মূল কথা হচ্ছে যে, এককেন্দ্রিকতা দিয়ে আসলে দেশ চলতে পারে না। ১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশ, এটাকে অন্তত ১৭টি প্রদেশে বিভক্ত করতে হবে। তাহলে শত ফুল ফুটবে। আপনাদের অনেকেই মুখ্যমন্ত্রী হবেন, মন্ত্রী হবেন। কোনো প্রদেশের মন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী বলবেন, আমরা শিক্ষার দিকে নজর দেবো, কেউ বলবেন আমরা কৃষক ও শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করবো।
বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় মন্তব্য করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, জালেম কখনো ক্ষমতা ছাড়ে না, তাদের ক্ষমতা ছাড়াতে হয়। আজকে বিএনপি তাদের অফিসে কোনো সভা-সমাবেশ করতে পারছে না। সেখান থেকে তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কাজেই তাদের (বিএনপির) উচিত, যেদিন ধরে নিয়ে যাবে তার পরদিন আরও বড় পরিসরে আন্দোলনের ডাক দেওয়া। কারণ যারা জালেম, তারা কখনো ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। জালেমদের ক্ষমতা ছাড়াতে হয়। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাদের পতন হয়।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ।