সার্চ কমিটি নিয়ে ১৪ দলের কারো কারো কি ‘আগ্রহের ঘাটতি’?

হাসান শান্তনু

১৪ দলীয় জোট
ফাইল ছবি

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে গত প্রায় দুইমাস ধরে তর্ক-বিতর্ক চলছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ দলটির মিত্র ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিসহ দলটির মিত্রদের মধ্যে। দুটি রাজনৈতিক পক্ষের বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্যের মধ্যে ১৪ দলের নেতারা সেভাবে জড়াননি। ইসি গঠনে আইন পাস ও সার্চ কমিটি (অনুসন্ধান কমিটি) গঠিত হওয়ার পর ১৪ দলের শরিকরা কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, আওয়ামী লীগের ‘আদর্শিক মিত্র’ ১৪ দলীয় জোটের অর্ন্তভুক্ত কোনো দলের কি সার্চ কমিটি নিয়ে ‘আগ্রহের ঘাটতি’ আছে?

১৪ দলের জোটের শীর্ষপর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মত ও পথকে বলেন, ‘এর আগে ২০১২ ও ২০১৭ সালে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠনের আগে জোট নেতাদের মধ্যে যে আগ্রহ ছিল, এবার দুই থেকে তিনজন নেতার মধ্যে আগের মতো তা নেই। এর কারণ, মন্ত্রিসভায় তাঁদেরকে না রাখায় কিছুটা ক্ষোভ থাকতে পারে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগও একলা চলো নীতিতে চলছে। তবে কারো ব্যক্তিগত ক্ষোভ জোটের উপর পড়ার সুযোগ নেই।’

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই জোট নেতা মত ও পথকে বলেন, ‘আগে সার্চ কমিটির মাধ্যমে দুইবার ইসি গঠিত হলেও মুক্তিযুদ্ধের পর পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এবার প্রথমবারের মতো আইনের মাধ্যমে গঠিত হয়। ১৪ দলীয় জোটের নীতিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে- আগ বাড়িয়ে কোনো মন্তব্য করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিতর্ক তৈরির সুযোগ না দেওয়া। ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে জোটভুক্ত দলগুলো আলাদা অংশ নেয়। সেখানে ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের দাবি দলগুলো জানায় জোটগত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে।’

আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের তিনজন নেতা মত ও পথকে বলেন, ইসি গঠনে নাম প্রস্তাবের ক্ষেত্রে এবারও আওয়ামী লীগ শরিকদলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইউসি) কমিশনের সদস্য করার জন্য নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের নাম জোটের শরিক ও সমমনা ছোট দলগুলোর মাধ্যমে সার্চ কমিটির কাছে পাঠাবে। এ জন্য ১৪ দলের শরিক ও সমমনা অন্যদলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের। জোটের শরিক কোনো কোনো দলের শীর্ষ দু-একজন নেতাকে ফোন দিয়ে ঢাকায় থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কিছু ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গেও সরকারি দলের যোগাযোগ রয়েছে।

সূত্র বলছে, আজ ৮ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার বিকেলে গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে ইসি গঠনে সার্চ কমিটির কাছে কীভাবে, কাদের নাম প্রস্তাব করা হবে—তা নিয়ে আলোচনা হয়। সেই অনুযায়ীই পদক্ষেপ নেবে দলটি। কমিটির কাছে নাম পাঠানোর আগে জোট ও মহাজোটের শরিক দলগুলোর তালিকা থেকে সমন্বয় করা হবে। তাদের দেওয়া নামের তালিকা কেমন হতে পারে, সেটা বোঝার চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ।

অবস্থা বুঝে তাদেরকে এ বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক পরামর্শও দেওয়া হতে পারে নেতৃত্বে থাকা দল আওয়ামী লীগের পক্ষে। এর আগে ২০১৭ সালে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন গঠনের আগেও এ কৌশল নেওয়া হয়। তখন সার্চ কমিটির কাছে সিইসিসহ তিনজন কমিশনারের নামের প্রস্তাব এসেছিল ১৪ দলের শরিকদের কাছ থেকে।

সূত্রমতে, ইসি গঠন কেন্দ্র করে ১৪ দলের জোটকে আবারো ‘সক্রিয়’ করার চেষ্টা শুরু হয় গত বছরের শেষদিকে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ শুরুর আগে জোটকে ‘সক্রিয়’ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দলগুলোর আলাদা সংলাপে ১৪ দলের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান প্রকাশ ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। তবে ইসি আইন প্রণীত ও সার্চ কমিটি গঠিত হওয়ার পর ১৪ দলের শরিক দলগুলোর কোনো কোনো নেতা প্রতিক্রিয়া জানাননি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইসি গঠনে সাংবিধানিক বিধান ও আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে। এ কমিটির প্রতি জনগণের পূর্ণ আস্থা, বিশ্বাস রয়েছে। বিএনপির মহাসচিব সার্চ কমিটি নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নেতিবাচক ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করছেন। ইসি গঠন নিয়ে তাঁর বক্তব্য মিথ্যাচার-অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর।’

শেয়ার করুন