করোনাভাইরাসের ভুয়া ‘নেগেটিভ সনদপত্র’ ও নতুন করে রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে অন্তত দেড় শতাধিক যাত্রীর ফ্লাইট (যাত্রা) বাতিল হচ্ছে। তাদের মধ্যে গড়ে প্রতিদিন আট থেকে দশজনের করোনা ‘নেগেটিভের জাল সনদপত্র’ ধরা পড়ছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশ যাত্রা বাতিল হওয়াসহ যাত্রীরা আর্থিক লোকসান গুনছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রবাসের কর্মস্থলে ফিরতে না পারার সংশয় ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, বিদেশগামী কোনো যাত্রীর করোনা পরীক্ষার ফল ‘পজিটিভ’ হলে পরের সাতদিনের মধ্যে তিনি বিদেশে যেতে পারেন না। ফলে করোনা মুক্ত হওয়ার জাল সনদপত্র নিয়ে বিমানবন্দরে ধরা পড়লে তাদের যাত্রা পিছিয়ে যায়। দেশে করোনার জাল সনদপত্রের বাণিজ্য চলতে থাকা, বা টাকা হলে হাতের কাছে মনমতো ‘সনদপত্র’ পাওয়ার ব্যবস্থা থাকা ও করোনার বিষয়ে যথাযথ সচেতনতার অভাবে সাধারণ বিদেশগামীরা প্রতারিত হচ্ছেন।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, জাল সনদপত্রসহ নানা কারণে প্রতিদিন অন্তত দেড় শতাধিক যাত্রীর ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের যাত্রী তারা। দেশ থেকে যে কোনো দেশে যেতে যাত্রার ঠিক ৭২ ঘণ্টা আগে করোনার ‘নেগেটিভ সনদপত্র’ দেখাতে সরকারি বাধ্যবাধকতা আছে। প্রায় সময় বাহ্যিক কোনো লক্ষণ না থাকলেও পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়ছে। শেষ সময়ে রোগটি ধরা পড়া ও ভিসার মেয়াদ কম থাকায় বা ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় সাধারণত প্রবাসীরা সনদপত্র জাল করতে বাধ্য হন। বিমানবন্দরে বিষয়টি আবার পরীক্ষার ফলে তারা ধরা পড়েন।
মত ও পথের অনুসন্ধান বলছে, শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন অন্তত সাড়ে দশ হাজার যাত্রী বিদেশে যান। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রবাসী কর্মী, তারা কর্মস্থলে যোগ দিতে দেশ ছাড়েন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই কর্মস্থলে যোগদানের তারিখের কাছাকাছি সময় টিকেট কিনে রাখেন। যেন ছুটির সর্বোচ্চ সময় তারা দেশে থাকতে পারেন। বিদেশ যাওয়ার আগ মুহূর্তে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার কারণেও অনেকে করোনায় আক্রান্ত হন বা সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়েন।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, শেষ মুহূর্তে করোনা শনাক্ত হওয়ায় গত জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৫৫০ প্রবাসী কর্মীর বিদেশ যাত্রা বাতিল করতে হত। তাদের মধ্যে অন্তত ২০০ জন থাকতেন সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী কর্মী। এ সংখ্যা গত কয়েকদিনে কমে এসেছে। নির্দিষ্ট ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় টিকিট পরিবর্তনে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে যাত্রীদের।
বিমানবন্দরের চিকিৎসক ডা. শাহরিয়ার এ প্রসঙ্গে মত ও পথকে জানান, ‘অনেকে মনে করেন, তারা করোনায় আক্রান্ত হলে জ্বর, কাশি, সর্দির মতো বাহ্যিক লক্ষণ দেখা দেবে। এটা ভুল। এমন অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন, যাদের শরীরে কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।’ তিনি জানান, ‘কোনো যাত্রীর করোনা নেগেটিভ ধরা পড়লে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও বাতিল করা ফ্লাইটের সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসগুলো তাকে একটা নির্ধারিত সময়ের পরের ফ্লাইটে টিকেট কেনার পরামর্শ দেয়।’
তথ্যমতে, ২০২০ সালে বিভিন্ন দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর দেশে ফিরতে প্রথমে ‘নেগেটিভ সনদপত্র’ বাধ্যতামূলক করে সরকার। গত বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে কেউ বিদেশে যাওয়ার আগেও একই সনদপত্র বাধ্যতামূলক করে সরকার। দেশ ছাড়ার ৭২ ঘণ্টা আগে বা গন্তব্য দেশের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করোনা পরীক্ষা করার নির্দেশ দেয় সরকার।
২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার রোগী ধরা পড়ে। ওই দিন সরকারের ‘রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান’ (আইইডিসিআর) জানায়, দেশে তিনজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কথা।