পাঁচ বছরের ‘আমলনামা’ প্রকাশ করবেন সিইসি

হাসান শান্তনু

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। ফাইল ছবি

বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার বিদায় অনুষ্ঠান। ১৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর নেতৃত্বের নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্ধারিত পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে। ভালোবাসা দিবসে নির্বাচন ভবন ছাড়বেন তিনিসহ চার নির্বাচন কমিশনার। এর আগে সিইসি হিসেবে পাঁচ বছরের ‘আমলনামা’ লিখিত আকারে প্রকাশ করবেন নূরুল হুদা।

পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনকালে নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত ছিল ইসি। এ সময়ের মধ্যে সাংবিধানিক এ সংস্থার সাফল্য-ব্যর্থতার এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচন এবং কমিশনের ভূমিকা আসছে আলোচনায়। নিজেদের কার্যকালের গত পাঁচ বছরের মধ্যে কী কী দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে, বই আকারে সেগুলো প্রকাশ করবে ইসি। সংস্থাটির কার্যালয় সূত্র মত ও পথকে এসব তথ্য জানায়।

universel cardiac hospital

তথ্যমতে, বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ হবে আগাী ১৩ ফেব্রুয়ারি। নূরুল হুদার নেতৃত্বের কমিশনের বিদায় অনুষ্ঠানের আগের দিন। এ উপলক্ষে ইসির উদ্যেগে অনুষ্ঠান আয়োজনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। বইটি মূলত ইসির ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত কার্যকালের দায়িত্ব পালন, বা কার্যক্রমের প্রতিবেদন। তবে ‘সময়ের অভাবে’ ইসির গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি কার্যক্রমের কথা বইটিতে সংযোজন করা সম্ভব হয়নি। অনুষ্ঠানে বইটির মোড়ক উন্মোচন হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সিইসি নূরুল হুদা ও অন্যতম নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বিভিন্ন সময় তর্কে জড়ান। একজন অন্যজনের বিরুদ্ধে ‘মারাত্মক ও গুরুতর’ অভিযোগ করেন। একজনের বিরুদ্ধে আরেকজনের ‘নৈতিক অধ:পতন ও বাড়তি রাষ্ট্রীয় সুবিধা নেওয়ার’ অভিযোগও ছিল। সিইসি ও তালুকদারের ‘তর্ক-বিতর্ক’ বিভিন্ন সময় ‘আলোচনার খোরাকে’ পরিণত হয়। যা ছিল মূলত তাঁদের ব্যক্তিগত আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ। রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতারাও দুজনের ‘তর্কযুদ্ধের’ পক্ষে ও বিপক্ষে নিজ দলের অবস্থান অনুযায়ী বিভিন্ন সময় বক্তব্য দেন।

দেশের সাংবিধানিক সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত থেকে একজনের বিরুদ্ধে আরেকজনের প্রকাশ্যে ‘ব্যক্তিগত আক্রমণের’ ঘটনা ইসির ইতিহাসে তেমন নেই। একজনের সঙ্গে অন্যজনের মতবিরোধের বিষয়গুলো অবশ্য ইতিবাচকভাবে দেখেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, এটা গণতান্ত্রিক সমাজের অনুষঙ্গ। হুদা ও তালুকদারের ‘ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের’ পেছনে ছিল ইসিতে নূরুল হুদাকে ‘বস’ হিসেবে মাহবুব তালুকদারের মেনে নিতে না পারা।

দুজনই দেশের প্রশাসনে দীর্ঘদিন চাকরি করেন। বয়স ও চাকরির সুবাদে মাহবুব তালুকদার জ্যেষ্ঠ! তাঁর অধীনে একসময় নূরুল হুদা কাজ করতেন। মাহবুব তালুকদার একসময় সংসদ সচিবালয়ে অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। ওই সময় নুরুল হুদা ছিলেন সেখানে যুগ্মসচিব। তখন তালুকদার ছিলেন ‘বস’। হুদা কমিশনে যোগ্যতা, দক্ষতা ও আস্থায় ‘বসের পদে’ ছিলেন নূরুল হুদা।

যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারার ক্ষমতা পেশাদার আমলাদের যেমন থাকে, সেটা মাহবুব তালুকদার ইসিতে দেখাতে পারেননি বলে অভিযোগ আছে। গণমাধ্যমে ‘তর্কে’ জড়িয়ে প্রায়ই তিনি আলোচনা-সমালোচনায় থাকতে চেয়েছেন। ইসিতে দায়িত্ব পালনের শুরু থেকে তাই তাঁদের সম্পর্কে ‘টানাপোড়েন’ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে।

তবে ইসির প্রকাশিতব্য বইয়ে কোনো কর্মকর্তা বা কারো দ্বন্দ্বের বিষয়ে কিছু থাকছে না। বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২’ এর নির্ভরযোগ্য বাংলা পাঠ, জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন-২০২১’ বইয়েরও মোড়ক উন্মোচন হবে। অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত স্মার্টকার্ড দেবে ইসি।

যোগাযোগ করলে ইসির যুগ্ম-সচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান বুধবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে মত ও পথকে বলেন, ‘রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বীর মুক্তিযোদ্ধা খচিত স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে। ওই অনুষ্ঠানে ইসির গত পাঁচ বছরের কার্যক্রমের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হবে।’

জানা যায়, অনুষ্ঠানটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের। এতে কেএম নূরুলসহ চার নির্বাচন কমিশনারের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সিইসি হিসেবে সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদা এবং নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি তাঁরা শপথ নেন।

শেয়ার করুন