সার্চ কমিটিকে তালিকা দিচ্ছে আওয়ামী লীগ, আলোচনায় যাদের নাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির করে দেওয়া অনুসন্ধান কমিটির (সার্চ কমিটি) আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিজেদের পছন্দের একটি তালিকা দেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার দলের পক্ষ থেকে তালিকাটি জমা দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় উপস্থিত সদস্যদের কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার কারা হতে পারেন এমন যোগ্যতাসম্পন্ন পছন্দের ব্যক্তিদের নাম চান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। পরে দলীয় প্রধানের কথা মতো প্রত্যেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পাঁচজনের নাম দেন।

সভায় উপস্থিত থাকা একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ নেতাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে পছন্দের তালিকায় রেখেছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমকে। তিনি বর্তমানে বিশ্বব্যাংকে বিকল্প নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেখানে তার চাকরির মেয়াদ নভেম্বর পর্যন্ত রয়েছে। অবশ্য নতুন দায়িত্ব পেলে বিশ্বব্যাংকের চাকরি ফেলে আসতে কোনো বাধা নেই। শফিউল আলমকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই অনেকেই তার নাম তালিকায় রেখেছেন।

পছন্দের তালিকায় আরও রয়েছেন ড. মোহাম্মদ সাদিক। তিনি নির্বাচন কমিশন সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসির) চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনাসমৃদ্ধ বলে তাকেও পছন্দের তালিকায় রাখা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের কারও কারও তালিকায় রয়েছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াও। সাবেক আইন সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালও রয়েছেন তালিকায়।

জমা দেওয়া তালিকায় তিনটি নাম কমন রয়েছে বলে জানান সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা। দুই প্রধান বিচারপতির নামও লিখে জমা দিয়েছেন কয়েকজন। অবশ্য দলীয় সভাপতির ইচ্ছে অনুযায়ী ওই বৈঠকে জমা দেওয়া নামগুলো নিয়ে আর আলোচনা হয়নি।

সভায় সভাপতিমণ্ডলীর সকল সদস্য জমা দেওয়া নামগুলো যাচাই বাছাই করে সার্চ কমিটির কাছে জমা দিতে অনুরোধ করেন দলীয় সভাপতিকে। আগামী বৃহস্পতিবার সার্চ কমিটির কাছে আওয়ামী লীগ তাদের পছন্দের ১০টি নাম পাঠাবেন।

শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু হওয়া এই সভা সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে। সভায় সার্চ কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করা, বিএনপির লবিস্ট নিয়োগ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে নিরবিচ্ছিনভাবে সংগঠন শক্তিশালী করতে কাজ করতে বলেন তিনি।

সভায় আট বিভাগে যে আটটি টিম রয়েছে আওয়ামী লীগের ওই টিমগুলোকে সফর শুরু করতে নির্দেশ দেন দলীয় প্রধান। যেসব জেলা-উপজেলায় সম্মেলন হয়নি সম্মেলন সম্পন্ন করার কড়া নির্দেশনা দেন তিনি।

সাংগঠনিক সফরে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে এবং বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের কথা জনগণকে জানানোর জন্য নেতাদের নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র ও নির্বাচনে বিশ্বাস করে না এটা তুলে ধরতে হবে। এসময় জনগণকে স্মরণ করিয়ে বলতে হবে ২০০১ সালে বিনা রক্তপাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আওয়ামী লীগ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আর বিএনপি ১৯৯৬ সালে ও ২০০৬ সালেও ক্ষমতা ছাড়তে চায়নি। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার সব চেষ্টা করেছে। ওই দলের মুখে গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে এত বড় বড় সবক মানায় না।

সভায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন কমিশন গঠন আইন নিয়ে বলেন, পৃথিবীর কয়টি দেশে এমন আইন রয়েছে, সেসম্পর্কেও জনগণকে জানাতে বলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, সংগঠন ঐক্যবদ্ধ থাকলে, সরকারের উন্নয়নের প্রচার ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সোচ্চার থাকলে আগামী নির্বাচনেও জিতবে আওয়ামী লীগ।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজি জাফরউল্যাহ বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার সার্চ কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করবে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় প্রত্যেক সদস্য তাদের পছন্দের পাঁচজনের নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেন।

সভাপতিমণ্ডলীর ওই সভায় নবনিযুক্ত সভাপতিমণ্ডলীর তিন সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। সভায় ওই তিন নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা জানান।

শেয়ার করুন