ছয় মা‌সে বাণিজ্য ঘাটতি এক হাজার ৫৬১ কোটি ৬০ লাখ ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডলার
ফাইল ছবি

চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মা‌সে দেশে রেকর্ড পরিমাণ আমদানি হয়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী রফতানি ও রে‌মিট্যান্স আয় বা‌ড়ে‌নি। যার প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক বাণিজ্যে। এ সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৬১ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা দেশি মুদ্রায় এক লাখ ৩৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২৭ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৬৮৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) ওপর করা হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চল‌তি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথম ছয় মা‌সে (জুলাই-ডিসেম্বর) তিন হাজার ৮৯৭ কোটি ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি হয়েছিল তিন হাজার ১১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য।

তবে যে হারে আমদানি বেড়েছে সেই হারে রফতানি হয়নি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ইপিজেড-পণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে দুই হাজার ৩৩৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে চেয়ে ২৭ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। এই হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক এক হাজার ৫৬১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘যে হারে আমদানি হয়েছে, সেভাবে রফতানি বাড়েনি। রে‌মিট্যান্সের গতিও কম। যার কারণে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমদানি বেড়েছে এটা ভালো। এর মানে বিনিয়োগ হচ্ছে, নতুন কর্মসংস্থান হ‌বে। নতুন নতুন ক্রয়াদেশ আসছে, রফতানি বাড়বে। তবে আমদানির আড়ালে যেন অর্থপাচার না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, উল্লিখিত ছয় মাসে সেবা খাতের ঘাটতি ১৭৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।

চলতি অর্থবছরে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ তেমন বাড়েনি। অর্থবছরের ছয় মাসে ১৯০ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছে বাংলাদেশ। তার আগের অর্থবছরে যা ছিল ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ আগের বছরের চেয়ে মাত্র ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮৭ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে যা ছিল ৮৩ কোটি ২০ লাখ ডলার।

করোনায় বৈশ্বিক অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) টান পড়েছে। চলতি হিসাবে ঘাটতির অর্থ হলো—সরকারকে ঋণ নিয়ে চলতি লেনদেনের দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্সে ঘাটতি (ঋণাত্মক) দেখা দিয়েছে। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৮১৮ কোটি ডলার ঘাটতি রয়েছে।

দেশের শেয়ার বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে। অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) শেয়ার বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) যা এসেছিল, তার চেয়ে ৯ কোটি ডলার বেশি চলে গেছে। তার আগের অর্থবছর শেয়ার বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আরও বেশি, অর্থাৎ ১৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার নেগেটিভ (ঋণাত্মক) ছিল

শেয়ার করুন