আবারও পানির দাম বাড়াতে চায় ঢাকা ওয়াসা। এ জন্য সরকারকে ২০ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে। পানির ওপর সরকারি ভর্তুকি কমাতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত ওয়াসার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি।
অবশ্য ৭ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটির যে বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে পানির দাম ৪০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান; যদিও অধিকাংশ বোর্ড সদস্য তার এ প্রস্তাবে সম্মতি প্রকাশ করেননি। প্রসঙ্গত, গত ১৩ বছরে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে ১৪ বার। করোনাকালেও দুই বছরে দুবার আবাসিক ও বাণিজ্যিক পানির দাম বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা। তবে প্রতিবছর পানির দাম বাড়লেও ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত পানির গুণগত মান বাড়েনি। সরবরাহ লাইনের পানি সরাসরি পান করার মতো বিশুদ্ধ নয়। এমনকি কোনো কোনো এলাকায় পানি ফুটিয়েও পান করা যায় না। এটাই যখন বাস্তবতা, তখন ওয়াসার পানির দাম আরেক দফা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হলো কেন?
বর্তমানে আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। ওয়াসার প্রস্তাব অনুযায়ী আবাসিকে এ দর ২১ টাকা ২৫ পয়সা করার কথা বলা হয়েছে। আর বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম বর্তমানে ৪২ টাকা। ওয়াসার প্রস্তাব অনুযায়ী, বাণিজ্যিক সংযোগে পানির দাম দাঁড়াবে ৫৮ দশমিক ৮ টাকা। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দাম কার্যকর করতে চায় ঢাকা ওয়াসা।
বস্তুত ঢাকা ওয়াসা যে প্রতিবছরই পানির দাম বাড়িয়ে চলেছে, তার প্রধান কারণ সংস্থাটির সামগ্রিক ব্যর্থতা। কর্তৃপক্ষের অনিয়ম, দুর্নীতি, একনায়কতন্ত্র ও অদক্ষতার কারণে ঢাকা ওয়াসা একটি ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ওয়াসা কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কারণে একদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় বেশি হচ্ছে, অন্যদিকে ঘাটতি মেটাতে দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে পানির দাম।
পানির দাম নিয়ে যে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে, তার অবসান ঘটাতে হলে ওয়াসার দুর্নীতি দূর করতে হবে প্রথমে। ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর যে পাঁয়তারা চলছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। নিজেদের ব্যর্থতার দায় জনগণের ওপর চাপানো হবে-এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের উচিত প্রথমে নিজেদের দিকে তাকানো। পানির দাম বাড়ানোর তৎপরতার পরিবর্তে তাদের উচিত পানির গুণগত মান বাড়ানো।