নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সার্চ কমিটির (অনুসন্ধান কমিটি) কাছে নাম প্রস্তাবের বিধান আছে। বিষয়টিকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের নামে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ছড়িয়ে পড়ছে। ইসিতে তাদেরকে রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে প্রস্তাব করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। ফেসবুকের মতো অসমর্থিত ও অনির্ভরযোগ্য মাধ্যম থেকে এসব নাম নিয়ে একাধিক সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদন প্রচার ও প্রকাশ করেছে। ফলে সার্চ কমিটিতে প্রস্তাবিত নাম নিয়ে মনগড়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে।
খোঁজ নিলে জানা যায়, নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে এবার রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায়ে দেশ ও বিদেশ থেকে অনেকের নামে প্রস্তাব এসেছে। দেশ ও বিদেশে অবস্থানরত নাগরিকদের মধ্যে অনেকে নিজের প্রস্তাবিত নাম ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছেন। কেউ কেউ নিজের প্রস্তাবিত নামকে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবিত নাম বলে প্রচার করছেন। বিষয়গুলো কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়া ছড়িয়ে পড়ছে। এতে বিতর্কিত ব্যক্তির নামও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নামে প্রস্তাবিত বলে মিথ্যাতথ্য ছড়ছে।
জানা গেছে, সিলগালা বা বদ্ধ খামে করে সার্চ কমিটির কাছে প্রস্তাবিত নামের তালিকা জমা দেয় বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠন। কোনো দল ও সংগঠন নামের তালিকা প্রকাশ করতে না চাইলে এ বিষয়ে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করে। দলীয় সূত্রগুলো সাংবাদিকদের নামের বিষয়ে না জানালে তা জানা সম্ভব নয়। এমনকি যে কোনো দলের শীর্ষপর্যায়ের সব নেতা নিজের দল থেকে প্রস্তাবিত নামগুলো জানেন না। দলের শীর্ষপর্যায়ের সূত্রগুলো মূলত নিজের দলের প্রস্তাবিত নামের কথা সংবাদমাধ্যমে জানায়। সেই সূত্রে কয়েকজনের নাম সংবাদমাধ্যমের আলোচনায় আছে।
আবার একাধিক রাজনৈতিক দল প্রস্তাবিত নাম সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করেছে। ফলে তাদের প্রস্তাবিত নামের কথা জানা সম্ভব হচ্ছে। অনুসন্ধান কমিটির কাছে পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দল বিকল্পধারা। দলটি গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে নামগুলো প্রকাশ করে।
১১ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার দুপুরে অনুসন্ধান কমিটির কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিতে ১০ জনের নামের তালিকা জমা দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ নামের তালিকা জমা দিয়ে সাংবাদিকদেরকে জানান, সিলগালা খামে করে তালিকা তাঁরা জমা দিয়েছেন। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের সিদ্ধান্তে নামের তালিকা করা হয়েছে। তাঁরা শুধু বার্তাবাহক হিসেবে চিঠি জমা দিয়েছেন। কাদের নাম আছে, তা জানেন না।
আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্বে থাকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর যুগ্ম সচিব শফিউল আজিমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানান, ‘এবার ব্যক্তিগত পর্যায়ে দেশ ও বিদেশ থেকে অনেক বড় সংখ্যায় প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এগুলো এসেছে মূলত ই-মেইলে। মোট কতজনের প্রস্তাব এসেছে, তা বলতে পারব না। নামগুলোর তালিকা করে এখন অনুসন্ধান কমিটির সামনে উপস্থাপন করা হবে।’
জানা যায়, যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগসহ মোট ২৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অনুসন্ধান কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সবমিলিয়ে অন্তত পাঁচশ ব্যক্তির নাম জমা পড়েছে সার্চ কমিটিতে। এর কম বা বেশিও হতে পারে। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইসি গঠনে কোনো নাম জমা দেয়নি।
বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে ৩৯টি। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী শুক্রবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নাম দেওয়ার অনুরোধ করেছিল সার্চ কমিটি। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াও ছয়টি পেশাজীবী সংগঠন থেকে নামের প্রস্তাব এসেছে। সংগঠনগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন ও ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনও আছে।