দৈনন্দিন জীবনে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি কার্ড গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অনেক কার্ডে তথ্য ভুল থাকায় সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, পরিচয়পত্রে ভুল থাকায় চাকরি হচ্ছে না, কেউ বেতন পাচ্ছেন না, কেউবা ব্যাংকের নিয়মের গ্যাঁড়াকলে পড়ে টাকা উত্তোলন করতে পারছেন না। পরিচয়পত্রে ভুল থাকায় অনেক হতদরিদ্র ভিজিএফসহ বিভিন্ন ত্রাণ নিতে পারছেন না। এ রকম অসংখ্য সমস্যার সম্মুখীন সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি সহযোগি এক দৈনিকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে বলা হয়, এনআইডি কার্ডে তথ্য ভুল থাকায় তা সংশোধনের জন্য রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন অফিস এবং জেলা ও থানা নির্বাচন অফিসগুলোতে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। সংশোধন হচ্ছে তার ১০ শতাংশের নিচে। বাকি ৯০ শতাংশ গ্রাহক দিনের পর দিন ঘুরছেন কিন্তু সুরাহা পাচ্ছেন না। ইসির দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারাদেশে প্রতিদিন হাজার খানেক আবেদন জমা পড়ে। এ বিষয়ে তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে। যার মধ্যে সামান্য ভুল থাকলে তা উপজেলা-জেলা অফিস থেকে সমাধান করা হয়। কিন্তু নানা ছুঁতোয় উপজেলা বা জেলা কার্যালয় এনআইডি সংশোধনে নানান বাহানা দেখায়। এ কাগজ সে কাগজ চায়, যার ফলে দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিসে লক্ষাধিক এনআইডি সংশোধনের জন্য পড়ে রয়েছে। আর বয়স বা জটিল কোনো সংশোধনের জন্য আবেদনগুলো প্রধান কার্যালয়ে চলে আসে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই ভুলের জন্য ইসির কর্মীরাই দায়ী। তাদের ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ নাগরিকদের। কার্ডের তথ্য সংশোধনের জন্য গুনতে হচ্ছে টাকা। সঙ্গে ভোগান্তি তো আছেই। কার্ড সংশোধনে মাসের পর মাস ও অনেক ক্ষেত্রে বছরও লেগে যাচ্ছে। এমন অবস্থার জন্য দায়ী কে?
অদক্ষ কর্মী ও দায়িত্বে অবহেলার জন্য এই ভুলের ছড়াছড়ি। যখন জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয় তখন ইসির অদক্ষ কর্মীরা তথ্য সংরক্ষণে যে ভুল করেছেন তারই কারণে আজকে নাগরিকদের এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ভোগান্তি দূর করতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির সেবা কার্যক্রম। ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধন, হারানো কার্ড উত্তোলন এবং নতুন কার্ড মুদ্রণে উপজেলা অফিস, জেলা অফিস, আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অণুবিভাগের (এনআইডি) কার কী ক্ষমতা তাও নির্ধারিত করা হয় প্রজ্ঞাপনে। তারপরও বিড়ম্বনা কমছে না। এর জন্য নাগরিকরাও দায়ী কম নয়। জানা গেছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদে প্রতিবারই তথ্য সংগ্রহের সময় উভয়পক্ষের গাফিলতির কারণে তথ্যের গরমিল থাকছে। এসব ক্ষেত্রে নামের বানান, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, পিতা-মাতার নামের বানান নির্ভুল করা যায়নি। মাঠপর্যায়ের অনিয়ম পর্যবেক্ষণ করে ভোটার তথ্য সংগ্রহ ফরমে পিতা-মাতার নাম ও বর্তমান ঠিকানা ভুল করা এবং আইডি নম্বরের ঘর খালি রাখা, শনাক্তকারীর স্বাক্ষর না থাকা, সুপারভাইজার ও যাচাইকারীর নাম ও স্বাক্ষর না থাকা, আঙুলের অস্পষ্ট ছাপ, ইংরেজি ও বাংলা বানানে অসামঞ্জস্যসহ ২১টি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়। দায়ী মাঠকর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। তবে কারো বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১০ কোটি ৯৮ লাখ ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে অনেক নাগরিকের কোনো না কোনো সমস্যা রয়েছে এনআইডিতে। তারা সেবা নিতে এসে বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছেন। ভোগান্তির যেন শেষ নেই।
এনআইডি এখন জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্যও এনআইডি প্রয়োজন। ভুলত্রুটি সংশোধনে সহজ সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হতে হবে। সাধারণ নাগরিকদের ভোগান্তি কমাতে হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী