স্বামীকে বাঁচাতে রেখা রানী ছুটে গেলেন আবুধাবি

ফেনী প্রতিনিধি

অর্জুন শীল ও রেখা রানী শীল
অর্জুন শীল ও রেখা রানী শীল। সংগৃহীত ছবি

ছয় বছর ধরে চিকিৎসা করছিলেন। তাও বিদেশবিভুঁইয়ে- সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি খলিফা হাসপাতালে। ২০০৭ সালে জীবিকার তাগিদে সেখানেই পাড়ি জমিয়েছিলেন অর্জুন শীল। কিন্তু অনেক চিকিৎসার পরও কিছুতেই ভালো হচ্ছিল না তার শরীর। দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে- এ কথা জানার পর তার মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়ে।

অর্জুন শীলকে (৪৬) বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তার স্ত্রী রেখা রানী শীল। দেশ থেকে যোগাযোগ করেন দুবাইয়ের চিকিৎসকদের সঙ্গে। বলেন, স্বামীকে তিনিই কিডনি দেবেন। কিন্তু রক্তের গ্রুপে মিল না থাকায় হতাশাচ্ছন্ন হতে হয় তাকে। তবে রেখা রানীর আকুলতায় বিকল্প পথ খুঁজতে থাকেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকরা।

universel cardiac hospital

একসময় বিকল্প পথ খুঁজেও পান হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তারা জানান, রেখা রানী তার কিডনি দান করলে সেটির বিনিময়ে তারা অর্জুন শীলের উপযোগী অন্য একটি কিডনির ব্যবস্থা করে দেবেন। এর ফলে শুধু অর্জুন শীল নন, আরও একজন কিডনি রোগী বেঁচে থাকার সুযোগ পাবেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান ফেনী সদর উপজেলার রেখা রানী শীল। দ্রুত রওনা হন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দিকে। বর্তমানে তিনি দেশটির রাজধানী আবুধাবিতে স্বামীর সঙ্গে রয়েছেন।

১৯৯৯ সালে ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের অর্জুন শীলের সঙ্গে বিয়ে হয় একই উপজেলার মজলিশপুরের রেখা রানী শীলের। পরে জীবিকার তাগিদে অর্জুন শীল ২০০৭ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি জমান। আবুধাবিতে একটি সেলুন দোকান পরিচালনা করতেন তিনি। আবুধাবির শেখ খলিফা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৯ সালে অর্জুন জানতে পারেন, তার একটি কিডনি বিকল হয়ে গেছে। কয়েক বছরের মধ্যে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে এবং চিকিৎসকরা জানান, তার অন্য কিডনিও নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থা তাকে বাঁচাতে গত ১ ফেব্রুয়ারি আবুধাবিতে ছুটে যান রেখা রানী শীল।

শনিবার দুপুরে রেখা রানী শীল মুঠোফোনে বলেন, ‘স্বামীই আমার সব। কিন্তু সে অসুস্থ। সে বাঁচলেই আমি বাঁচি। তাকে বাঁচতেই হবে। তিনটি মেয়ে নিয়ে আমাদের সংসার। আমাদের জন্য তাকে বাঁচাতে আমি সবার সহযোগিতা চাই।’

অর্জুন শীল জানান, তার স্ত্রী তাকে একটি কিডনি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার রক্তের গ্রুপ ‘ও’ পজিটিভ আর রেখা রানীর রক্তের গ্রুপ ‘বি’ পজিটিভ। এতে কিডনি স্থানান্তরে সমস্যা দেখা দেয়। পরে আবুধাবি খলিফা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রেখা রানীর কিডনির বিপরীতে অন্য একজনের দান করা কিডনি তাকে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসকের পরামর্শে তাদের কিডনি স্থানান্তরের কাজ এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে রেখা রানীর কয়েকটি শারীরিক পরীক্ষাও শেষ হয়েছে। সব ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারিতেই তাদের কিডনি স্থানান্তর হবে।

শেয়ার করুন